সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করা হচ্ছে, যেখানে দেখা যায়--আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় এক আসামীর মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে এবং তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৫ জুলাই 'Sayem Talukder' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে ভিডিওটি শেয়ার করে বলা হয়, "ইউনুসের এই বিচার ব্যবস্থা জাতি মনে রাখবে আজীবন। আদালত প্রাঙ্গনে যদি আসামি নিরাপদ না তাকে তাহলে মানুষ কোথায় নিরাপদ একটু বলবেন।এগুলো প্লান করেই করা হচ্ছে যাতে করে সরকারের বিপক্ষে কেউ কথা বলতে সাহস না পায়।" ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য ভিডিওটি এআই প্রযুক্তিতে তৈরি। গত ১৬ জুন মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় নাফিজা জান্নাত আনজুম নামে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে হত্যার অভিযোগে মো. জুনেল মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত ওই ব্যক্তিকে আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত করার একটি স্থিরচিত্রকে এআই প্রযুক্তিতে এডিট করে আলোচ্য ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
আলোচ্য ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ভিডিওটির নিচের দিকে Minimax এবং Hailuo লেখা দেখতে পাওয়া যায়। কি-ওয়ার্ড সার্চ করে জানা যায়, ফাউণ্ডেশন এআই মডেল মিনিম্যাক্স এবং মিনিম্যাক্সের ভিডিও জেনারেটর হাইলাওয়ের সাহায্যে প্রম্পটের ভিত্তিতে ভিডিও তৈরী করা হয়। স্ক্রিনশট দেখুন--
পরবর্তীতে আলোচ্য ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম কেটে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম সময় টেলিভিশনের অনলাইন ভার্সনে গত ১৬ জুন "মৌলভীবাজারে নাফিজা হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন, আসামি গ্রেফতার" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে আলোচ্য ভিডিওটির মত দেখতে একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, "মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিজা জান্নাত আনজুম হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত প্রতিবেশী মো. জুনেল মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নিহতের বোরকা, স্কুলব্যাগ, বই ও জুতা বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।" স্ক্রিনশট দেখুন--
এবারে, আলোচ্য পোস্টটি থেকে নেওয়া একটি স্ক্রিনশট (বামে) এবং উপরের প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত ছবিটির একটি স্ক্রিনশট (ডানে) দেখুন পাশাপাশি--
পরবর্তীতে আরো কি-ওয়ার্ড সার্চ করে অনলাইন পোর্টাল ঢাকা মেইল, প্রতিদিনের বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও ওই একই তথ্যসহ একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
এছাড়া আলোচ্য ছবির ব্যক্তিকে আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের উপস্থিতিতে আঘাত করার কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। পুলিশি হেফাজতে থাকা এক অভিযুক্তের ছবিকে এডিট করে এআই তথা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে আলোচ্য ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
সুতরাং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে পুলিশি হেফাজতে থাকা অভিযুক্তের ছবিকে এডিট করে ভুয়া ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে যা বিভ্রান্তিকর।