সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পুলিশ সদস্য কর্তৃক এক ব্যক্তিকে প্রহার ও গুলি করে রাস্তায় ফেলে চলে যাওয়ার ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়েছে, এটি গোপালগঞ্জের ভ্যান চালক রমজানকে গ্রেফতারের পর জনসম্মুখে গুলি করে হত্যার ভিডিও। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২০ জুলাই ‘Abdur Rahman Jibon’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, “গোপালগঞ্জের ভ্যান চালক রমজানকে গ্রেফতারের পর যেভাবে জনসম্মুখে গুলি করে হত্যা করা হয়, হায়রে পুলিশ হায়রে মানবতা ..... এখন আসমানও কাপে না, কারোর বুকও কাপে না। রমজান আলীরা মানুষ না হয়তো পশু পাখি ভেবেই এমন নির্মমভাবে হত্যা করেছে।” পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
গোপালগঞ্জে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়া ভ্যানচালক ব্যক্তির পুরো নাম রমজান মুন্সি (৩২)। তিনি ঘটনার দিন (১৬ জুলাই) গুলিতে আহত হয়েছিলেন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় এর দুইদিন পর ১৮ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য ভিডিওটি ২০২৪ সালের ০৫ আগস্ট গাজীপুরের কোনাবাড়িতে নিহত হৃদয়কে পুলিশের গুলি করার ভিডিও। গোপালগঞ্জে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতের সংখ্যা অন্তত পাঁচ জন যাদের মধ্যে দুইজনের নাম রমজান। ভ্যানচালক রমজান মুন্সির এজাতীয় কোনো ভিডিও গ্রহণযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে দ্বিতীয়জন রাজমিস্ত্রি (রমজান কাজীর) দেহ নিয়ে যাওয়ার দাবিতে গণমাধ্যমে যে ভিডিও পাওয়া গেছে তার সাথে আলোচ্য ভিডিওটিরও কোনো মিল নেই।
ভিডিও থেকে কি-ফ্রেম নিয়ে ছবি রিভার্স ইমেজ সার্চ এর মাধ্যমে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম ‘যমুনা টেলিভিশনের’ ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ০২ সেপ্টেম্বর “শটগান ঠেকিয়ে গুলি করলো পুলিশ, মামলা হলো সাংবাদিকের নামে | Konabari Ridoy Death” শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে ফেসবুকে প্রচারিত আলোচ্য ভিডিওটি উল্লেখপূর্বক এই বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, ভিডিওটি ২০২৪ সালের ০৫ আগস্ট বিকেলে গাজীপুরের কোনাবাড়ি থানার পাশে হৃদয় নামের একজনকে পুলিশ কর্তৃক গুলি করার সময়ে ধারণ করা। অন্য আর একটি ভিডিওতে হৃদয়ের মরদেহকে পুলিশ কর্তৃক থানার দিকে নিয়ে যাওয়া হয় (সংক্ষেপিত)। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
পাশাপাশি, প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সার্চ এর মাধ্যমে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘ঢাকা টাইমস’-এ ২০২৪ সালের ০৭ সেপ্টেম্বর “কোনাবাড়ীতে ছাত্র হত্যায় কনস্টেবল আকরাম গ্রেপ্তার” শিরোনামে প্রকাশিত আরো একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনের ফিচার ছবিতে (কোলাজ) আলোচ্য ভিডিওর একটি দৃশ্যও যুক্ত করা হয়।
এতে উল্লেখ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে গুলি করে কলেজছাত্র মো. হৃদয়কে (২০) হত্যার মামলায় পুলিশ কনস্টেবল মো. আকরাম হোসেন (২২) গ্রেপ্তার হয়েছেন (সংক্ষেপিত)। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
গত ১৬ই জুলাই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতায় গোপালগঞ্জে রমজান নামের একজন নিহত হয়েছেন। ঐদিনের ঘটনাস্থলে রমজান কাজীর ভিডিও উল্লেখ করে 'বিবিসি বাংলা' ও আরেক সংবাদমাধ্যম 'টাইমস অব বাংলাদেশ' যে ভিডিও প্রকাশ করেছে তার সাথে ফেসবুকে প্রচারিত আলোচ্য ভিডিওটির কোনো মিল পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ আলোচ্য ভিডিওটি ২০২৪ সালের ০৫ আগস্ট গাজীপুরের কোনাবাড়িতে নিহত হৃদয়কে পুলিশের গুলি করার ভিডিও।
উল্লেখ্য গত ১৮ জুলাই গোপালগঞ্জে গুলিবিদ্ধ আরও একজনের মৃত্যু হওয়ায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫ জনে দাঁড়িয়েছে। তারা হলেন দীপ্ত সাহা (২৫), কোটালীপাড়ার রমজান কাজী (১৮), টুঙ্গিপাড়ার সোহেল মোল্লা (৪১) ও সদর উপজেলার ভেড়ার বাজার এলাকার ইমন (২৪) এবং রমজান মুন্সী (৩২)।
নিহত দুইজন রমজানের ক্ষেত্রে রমজান কাজীর দেহ নিয়ে যাওয়ার দাবিতে গণমাধ্যমে ভিডিও পাওয়া গেলেও রমজান মুন্সির এজাতীয় কোনো ভিডিও গ্রহণযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায়নি। যেহেতু ফেসবুক পোস্টে 'ভ্যানচালক রমজান' উল্লেখ করা হয়েছে সুতরাং পোস্টগুলোতে রমজান কাজী নয় বরং রমজান মুন্সির কথা বলা হয়েছে।
এছাড়াও রমজান মুন্সির ভাই ইমরান মুন্সী জানিয়েছেন, তার ভাই একজন অটোরিকশা চালক ছিলেন। ঘটনার দিন রিকশা চালিয়ে যাওয়ার পথে গোপালগঞ্জ সদরের চৌরঙ্গী লঞ্চঘাটে (কোর্টের সামনে) আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে রমজান আহত হন বলেও জানান তিনি।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে ২০২৪ সালের গাজীপুরে নিহত হৃদয়ের ভিডিও সম্প্রতি গোপালগঞ্জে নিহত রমজানের বলে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।