সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের উপরে হামলার সময়ে ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১৭ জুলাই 'জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু' নামে একটি ফেসবুক পেজে ভিডিওটি শেয়ার করে লেখা হয়, "গোপালগঞ্জে দ্বিতীয় দফায় শুরু হয়ে গেছে, অবরুদ্ধ থাকা এনসিপি নেতাদের আপ্যায়ন শুরু করেছে গোপালগঞ্জের আপামর জনতা।' #sheikhgogonbabu"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইভটিজিং-এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে আলোচ্য ভিডিওটি ধারণ করা হয়।
আলোচ্য ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ভিডিওটির উপরের দিকে Dhakawave.com লেখা থাকতে দেখা যায়। পরবর্তীতে ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম কেটে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে 'Dhakawave Digital' নামে একটি ফেসবুক পেজে ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর পোস্ট করা আলোচ্য ভিডিওটির মত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির ১ মিনিট ৪২ সেকেন্ড থেকে আলোচ্য ভিডিওটির মত দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, "গোপালগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ। বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপ; পাল্টা-পাল্টি ধাওয়ায় রণক্ষেত্র নবীনবাগ।" ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
পরবর্তীতে, উপরের ফেসবুক পোস্টের তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক পত্রিকা কালের কণ্ঠের অনলাইন ভার্সনে ২০২১ সালের ২২ নভেম্বর "ইভ টিজিংয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জে দফায় দফায় সংঘর্ষ" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, "গোপালগঞ্জে ইভ টিজিংয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে ইটের আঘাতে পুলিশ ও সংবাদকর্মীসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে চারজনকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।"। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, অনলাইন পোর্টাল বাংলাদেশ জার্নাল, আমাদের সময় ডট কম, খুলনা থেকে প্রকাশিত স্থানীয় পত্রিকা খুলনা গেজেটের ওয়েবসাইটেও একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য ভিডিওটি সাম্প্রতিক গোপালগঞ্জের সংঘটিত কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে ধারণ করা হয়নি। উল্লেখ্য গত ১৭ জুলাই গণসংযোগের উদ্দেশ্যে করা জুলাই পদযাত্রা নিয়ে এনসিপির নেতৃবৃন্দ গোপালগঞ্জে গেলে দলটি সেখানে পৌঁছানোর আগে ও পরে মঞ্চ ভাঙচুর এবং নেতাদের উপরে হামলা চালানো হয়।
সুতরাং গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের পুরোনো ভিডিওকে নতুন করে ভিন্ন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।