সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, ভিডিওটি সম্প্রতি ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের উপরে যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ধারণ করা হয়েছে। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২১ জুলাই 'Abu Kaisar' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে আলোচ্য ভিডিওটি শেয়ার করে বলা হয়, "বিধ্বস্ত প্রশিক্ষণ বিমানের পাইলট যেভাবে বেঁচে গেলেন। রাজধানীর উত্তরা এলাকায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় হতাহতের আশঙ্কা দেখা দিলেও পাইলট বিস্ময়করভাবে প্রাণে বেঁচে গেছেন।"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য ভিডিওটি সম্প্রতি উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজে যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার নয় বরং এটি ২০২৪ সালের ৯ মে চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ চলাকালে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে অসীম জাওয়াদ নামে এক পাইলট নিহত হওয়ার ঘটনার ভিডিওটি।
আলোচ্য ভিডিওটির ব্যাপারে জানতে ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম কেটে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দৈনিক পত্রিকা সমকালের ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ৯ মে "চট্টগ্রামে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচ্য ভিডিওটির মত একটি স্থিরচিত্র খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, "চট্টগ্রামে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরের পতেঙ্গা কর্ণফুলী নদীর মোহনায় বঙ্গোপসাগরে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। বিমানটির পাইলট ও কো-পাইলটকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম জানা যায়নি। স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রশিক্ষণ বিমানটি পতেঙ্গার নৌ-বাহিনীর বোট ক্লাবের ওপর দিয়ে উড়ে যেতে দেখা যায়। এ সময় বিমানটির পেছনে আগুনের হল্কা দেখা যায়। এর পরপরই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় সাগরে পড়ে। আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর জানায়, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি ওয়াই এ কে-১৩০ (YAK 130) প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পতেঙ্গা এলাকায় দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। দুর্ঘটনার সময় প্রশিক্ষণ বিমানটির দুজন পাইলট প্যারাস্যুটের সাহায্যে অবতরণ করেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর) শাকিলা সোলতানা বলেন, প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে সাগরে পড়েছে। বিমানের পাইলট ও কো-পাইলটকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়েছে।" স্ক্রিনশট দেখুন--
উপরের প্রতিবেদনের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেলে "চট্টগ্রামে বিধ্বস্ত প্রশিক্ষণ বিমানের এক পাইলট নিহত | Chattogram Plane Crash | News | Prothom Alo" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচ্য ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। এতে বলা হয়, "৯ মে বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দুই পাইলটকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে স্কোয়াড্রন লিডার অসীম জাওয়াদ মারা যান।..." ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন--
এছাড়াও যমুনা টেলিভিশন, চ্যানেল আই, ইউএনবি, এটিএন নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত সংবাদ থেকেও আলোচ্য ভিডিও সম্পর্কে একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য পোস্টে যুক্ত ভিডিওটি সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার নয়। এক বছর আগে চট্টগ্রামে ঘটে যাওয়া প্রশিক্ষন বিমান দুর্ঘটনার সময়ে আলোচ্য ভিডিওটি ধারণ করা হয়। উল্লেখ্য গত ২১ জুলাই ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের উপরে একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়।
সুতরাং এক বছরের পুরোনো উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার ভিডিওকে উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে সম্প্রতি যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনার বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।