সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বাংলাদেশের পতাকায় জড়ানো একটি মরদেহের ছবি পোস্ট করে বলা হয়েছে; জুলাই আন্দোলনে পাবনায় রাফি নামের একজন শহিদ হয়েছেন এবং ছবিটি তাঁর। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ০৪ জুলাই ‘History of July’ নামক পেজ থেকে ছবিটি পোস্ট করা হয়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, “আমার বাবা মারা গেছেন। আপনারা প্লিজ আমার বোনটাকে দেখে রাখবেন এটাই ছিল রাফির শেষ কথা, মৃত্যুর আগমুহূর্তে। এই জুলাই মাসে আমরা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি রাফির মতো সেসব মানুষকে, যারা নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন দেশের জন্য।” পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। পতাকা জড়ানো দেহের ছবিটি পাবনায় ২০২৪ সালের ০৪ আগস্ট শহিদ হওয়া মো. জাহিদুল ইসলামের। তাঁর বড় ভাই মো. তৌহিদুল ইসলাম ছবিটি দেখে বুম বাংলাদেশকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরো জানান 'আমার বাবা মারা গেছেন। আপনারা প্লিজ আমার বোনটাকে দেখে রাখবেন' এমন কোনো কথা মৃত্যুর আগে জাহিদ বলে যাননি।
অনুসন্ধানে ২০২৪ সালের ০৪ আগস্ট আলোচ্য ছবিটিসহ ৩টি ছবিযুক্ত একটি ফেসবুক পোস্ট পাওয়া যায়। এতে ছবির ব্যক্তিকে পাবনার শহিদ জাহিদ হাসান এবং পোস্টদাতা নিজের রুমমেট বলে উল্লেখ করেন (সংক্ষেপিত)। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সার্চ করে ফেসবুকে ২০২৪ সালের ০৪ আগস্ট প্রকাশিত আরও অসংখ্য (১, ২,৩, ৪, ৫) ফেসবুক পোস্ট পাওয়া যায়, যেখানে ছবির ব্যক্তিকে পাবনার শহিদ জাহিদ হাসান বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে সার্চ করে মূলধারার গণমাধ্যম 'কালের কণ্ঠ' এবং 'আজকের পত্রিকা'র প্রতিবেদনেও পাবনায় ২০২৪ সালের ০৪ আগস্ট শহিদ হওয়া মো. জাহিদুল ইসলামের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়।
আরো নিশ্চিত হতে শহিদ জাহিদের বড় ভাই মো. তৌহিদুল ইসলামকে ফেসবুকে প্রচারিত আলোচ্য ছবিটি দেখানো হলে তিনি বুম বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছেন, ছবিটি তার ভাই শহিদ জাহিদের।
তিনি আরো জানান, 'জাহিদ শাহাদতবরণের আগমুহূর্তে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া কথা গুলোর (আমার বাবা মারা গেছেন। আপনারা প্লিজ আমার বোনটাকে দেখে রাখবেন) এমন কোনো কথা বলেনি। মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার সাথে সাথেই মৃত্যুবরণ করেন। আমাদের বাবা বেঁচে আছেন এবং আমাদের চার ভাই বোনের মাঝে বোন সবার বড়ো আর জাহিদ ছিলো তৃতীয়।'
এছাড়াও জুলাই আন্দোলনের তথ্য নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট (শহীদ ডট ইনফো এবং জুলাই শহীদ ডট কম) শহিদ জাহিদের আন্দোলন সম্পর্কিত বিষয়ে একই তথ্য পাওয়া যায়।
অর্থাৎ ফেসবুকে প্রচারিত আলোচ্য ছবিটি পাবনায় শহিদ হওয়া মো. জাহিদুল ইসলামের।
উল্লেখ্য ২০২৪ সালের আগস্টে ছবিটি জুলাই আন্দোলনে আহত রাফিউল ইসলাম রাফির বলে প্রচার করা হলে সেসময়ে 'বুম বাংলাদেশ' রাফির সাথে কথা বলে দাবিটির সত্যতা যাচাই করেছিলো। এছাড়াও সেসময়ে রাফি জানিয়েছিলেন; 'আমার বাবা মারা গেছেন। আপনারা প্লিজ আমার বোনটাকে দেখে রাখবেন'- এমন কোনো কথা আন্দোলনে আহত হওয়ার পরে তিনিও বলেননি।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে পাবনায় শহিদ জাহিদের পতাকা জড়ানো মরদেহের ছবি আবেগঘন মন্তব্য জুড়ে দিয়ে রাফির বলে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।