ফেক নিউজ

পৃথক ঘটনার একাধিক ছবি জুড়ে দিয়ে ফেসবুকে সাহায্যের ভুয়া আবেদন

বুম বাংলাদেশ দেখেছে, অসুস্থ শিশুর ছবিটি আগেও সামাজিক মাধ্যমে দেখা গেছে আর ক্রন্দনরত নারীর ছবিটি এক রোহিঙ্গা শরণার্থীর।

By - Md Abdullah Khan | 21 Dec 2021 2:23 PM IST

পৃথক ঘটনার একাধিক ছবি জুড়ে দিয়ে ফেসবুকে সাহায্যের ভুয়া আবেদন

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে শরীরে ব্যান্ডেজ মোড়ানো একটি অসুস্থ শিশু ও ক্রন্দনরত এক নারীর ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, শিশুটির শরীরের প্রায় ৬০% পুড়ে গেছে সার্জারি করতে দুই লাখ বিশ হাজার টাকা প্রয়োজন। বলা হয়েছে, শিশুটি বর্তমানে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে। পোস্টটিতে আর্থিক সাহায্য পাঠানোর জন্য মুঠোফোনে আর্থিক লেনদেন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশ নম্বরও জুড়ে দেয়া হয়েছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

গত ১ ডিসেম্বর 'সেবক আল্লাহর' নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে করা এমন একটি পোস্টের স্ক্রিনশটে দেখুন--

পোস্টটি দেখুন এখানে
পোস্টটি দেখুন এখানে

ফ্যাক্ট চেক:

বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, পোস্টের বর্ণনায় করা দাবিটি বিভ্রান্তিকর ও প্রতারণাপূর্ণ। শরীরে ব্যান্ডেজ মোড়ানো শিশুর ছবিটি আগেও একাধিক দেশের সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হয়েছিল এবং কাঁদতে থাকা নারীর ছবিটি এক রোহিঙ্গা শরণার্থীর, অর্থাৎ ছবি দুটি সম্পর্কহীন।

রিভার্স সার্চ করে অসুস্থ শিশুর ছবিটি আফগানিস্তানের একটি ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইটে খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনের স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের মার্চে একই ছবি টুইট করে বিমান হামলায় এই শিশুটির মায়ের মৃত্যু হয়েছে দাবি করে ছবিটি ছড়ানো হয়েছিলো। এরকম একটি টুইটের স্ক্রিনশট দেখুন--

টুইটটি দেখুন এখানে
টুইটটি দেখুন এখানে

ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছবিটি মার্চ মাসেরও নয় বরং এটি এরও আগে সামাজিক মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া গেছে। উক্ত প্রতিবেদনে ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি এক নেপালি ফেসবুক ব্যবহারকারীর পোস্টে ছবিটি খুঁজে পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। স্ক্রিনশট দেখুন-- 

পোস্টের আর্কাইভ দেখুন এখানে

অর্থাৎ নিশ্চিতভাবেই ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। শিশুটি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে কিনা বা তার আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন কিনা জানার জন্য বুম বাংলাদেশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারাও এ বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারেননি। পাশাপাশি, ফেসবুক পোস্টে দেয়া ফোন নাম্বারটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।

ক্রন্দনরত নারীর পরিচয়

ভাইরাল পোস্টে ক্রন্দনরত নারীর ছবিটি রিভার্স সার্চ করলে, ২০১৬ সালে আউটলুক ম্যাগাজিনের একটি প্রতিবেদনে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর "Dozens of Rohingyas Missing as Boat Sinks Near Bangladesh" প্রকাশিত প্রতিবেদনের সাথে যুক্ত ছবিটি সংবাদসংস্থা এপি'র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে ওই নারী রোহিঙ্গা শরণার্থী বলে জানানো হয়।

প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে

অর্থাৎ এই ছবিটির সাথে ভাইরাল পোস্টের অসুস্থ শিশুর কোন সম্পর্ক নেই।  

অতএব শরীরে ব্যান্ডেজ মোড়ানো শিশুর পুরোনো ছবি এবং এক রোহিঙ্গা শরণার্থীর ছবি একসাথে জুড়ে দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য চাওয়া হচ্ছে, যা প্রতারণাপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর।

Tags:

Related Stories