সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হচ্ছে, ভারতীয় পার্লামেন্টে সংসদ সদস্যরা শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে পুনরায় ক্ষমতায় বসানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ০৬ই জুলাই ‘Bsl Raju’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, “খুব শীঘ্রই হবে বাংলাদেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায়ন। ভারতীয় পার্লামেন্টে সাংসদরা আহ্বান করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে পূর্ণ মর্যাদায় ক্ষমতায় বসাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য।” পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। ভিডিওটি বাস্তব ঘটনার নয় বরং এআই প্রযুক্তিতে তৈরি ভিডিওকে বাস্তব ঘটনার বলে প্রচার করা হয়েছে।
আলোচ্য ভিডিও থেকে কি-ফ্রেম নিয়ে ছবি রিভার্স ইমেজ সার্চ এর মাধ্যমে গণমাধ্যম কিংবা গ্রহণযোগ্য কোনো মাধ্যমে আলোচ্য ভিডিওর দাবির বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এমনকি বাংলা ও ইংরেজিতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কি-ওয়ার্ডে খুঁজেও আলোচ্য দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।
ফেসবুকে সার্চ করে একটি পোস্টে আলোচ্য ভিডিওটির তুলনামূলক কম সম্পাদিত একটি সংস্করণ পাওয়া যায়। ভিডিওতে জলছাপে "JPT Bangla News" লেখা উল্লেখ থাকতে দেখা যায় যা ফেসবুকে প্রচারিত অধিকাংশ ভিডিওতে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সার্চ করে ইউটিউবে একই নামের একটি চ্যানেলে আলোচ্য ভিডিওটির দীর্ঘ সংস্করণের একটি ভিডিও পাওয়া যায়।
চ্যানেলটি পর্যালোচনা করে দেখা যায় এতে বিভিন্ন সময়ে এআই দিয়ে তৈরি ভিডিও সহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্লিপ জুড়ে দিয়ে বিভ্রান্তিকর দাবি প্রতিবেদন আকারে প্রচার করা হয়।
পরবর্তীতে পর্যবেক্ষণ করে ফেসবুকে প্রচারিত আলোচ্য ভিডিওতে সাবজেক্ট ব্যাতীত বাকিদের চেহারার অস্পষ্টতা দেখা যায়। এমনকি কথা বলা অবস্থায় সাংসদের সামনে দুটি আলাদা মাইক এবং আলাদা পোডিয়ামের দৃশ্য দেখা যায়। সাধারণত সংসদের ভেতরের বাস্তব দৃশ্য ধারণের ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায়না।
তবে এআই প্রযুক্তিতে তৈরি ভিডিওতে সাধারণত বাস্তব দৃশ্যের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এরকম দৃশ্য পাওয়া যায়। এছাড়াও ভিডিওর অডিও অনেকটাই জেনারেটেড অডিওর ন্যায় শোনাচ্ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে গুগলের 'Veo' নামক ভিডিও জেনারেশন টুলের মাধ্যমে তৈরি ভিডিওতে এরকম অডিও আউটপুট দেখা গেছে।
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে অডিও সহ এটি গুগলের 'Veo' নামক ভিডিও জেনারেশন টুল থেকে তৈরি করার সম্ভাব্য কিছু সূত্র পাওয়া যায়। গুগল 'Veo' হলো গুগলের একটি প্রায় বাস্তবসম্মত ভিডিও জেনারেশন টুল যা গুগল ডিপমাইন্ড দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। এটি টেক্সট-টু-ভিডিও জেনারেশন, ইমেজ-টু-ভিডিও জেনারেশন এবং সর্বশেষ সংস্করণ, ভিও-৩ ভিডিওর পাশাপাশি নেটিভ অডিও তৈরি করতে পারে।
অন্যান্য জেনারেশন টুলের সাথে এর পার্থক্য হলো এটি কোনো দৃশ্য, মানুষের গঠন-নাড়াচাড়া এবং ভয়েস (অডিও) তুলনামূলকভাবে অন্যান্য টুলের চেয়ে বেশ ভালো বাস্তবতার মতো করে তৈরি করতে পারে।
এছাড়াও গুগলের জেনারেটিভ টুল তাদের কন্টেন্টে 'SynthID' নামক এক ধরণের ওয়াটারমার্কিং ব্যবহার করে যা খালি চোখে দেখা না গেলেও গুগলের SynthID ডিটেকশন টুল তা শনাক্ত করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় যাচাই করলেও টুলটি ভিডিওটিকে 'গুগলের এআই টুল দিয়ে তৈরি' বলে ফলাফল দিয়েছে। দেখুন--
এআই কন্টেন্ট ডিটেকশন টুল 'হাইভ' ব্যবহার করে যাচাই করলে ভিডিওটি ৯৯ শতাংশ সম্ভাব্য এআই দিয়ে তৈরি বলে ফলাফল দিয়েছে। দেখুন --
অর্থাৎ ভিডিওটি এআই প্রযুক্তিতে তৈরি।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে এআই প্রযুক্তিতে তৈরি ভিডিওকে বাস্তব ঘটনার বলে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।