সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হচ্ছে; সম্প্রতি ইয়েমেনের হুতিরা আরব সাগরে সৈন্যসহ আমেরিকান যুদ্ধ জাহাজ আটক করেছে। সম্প্রতি ভিডিওটি প্রচার করে ভিডিওটি সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট করে উপস্থাপন করা হয়েছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৪ জুন ‘Noman Ahmad’ নামক পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, “আরব সাগরে মা'র্কিন যু'দ্ধ জাহাজ সহ কয়েকজন মা'র্কিন সেনা কে আ'টক করেছে, ইরান সমর্থিত ইয়েমেনের হু'তি যো'দ্ধারা,,জাহাজটিতে রয়েছে বিপুল অস্ত্র ভান্ডার রয়েছে”। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন —
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি বিভ্রান্তিকর। ভিডিওটি সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো ঘটনার নয় এবং এটি ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের হাতে মার্কিন জাহাজ আটক হওয়ার ঘটনার নয় বরং এটি ৯ বছর আগে ২০১৬ সালে ইরানে নাবিক (সৈন্য) সহ দুটি মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজ আটকের সময়ের।
আলোচ্য ভিডিও থেকে কি-ফ্রেম নিয়ে ছবি রিভার্স ইমেজ সার্চ এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘সিএনএন’-এর ওয়েবসাইটে ২০২৬ সালের ১৪ জানুয়ারি “Video shows American sailor apologizing for Iran incident” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনের সাথে একটি ভিডিও সংযুক্ত করা হয়েছে যার সাথে ফেসবুকে প্রচারিত আলোচ্য ভিডিওর সাথে মিল পাওয়া যায়।
একই বিষয়ে সিএনএন -এর ইউটিউব চ্যানেলেও আলোচ্য ভিডিওটি সহ একই প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সিএনএন এর সাইটের প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট দেখুন--
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে; ১২ জানুয়ারী ২০১৬ তারিখে নেভিগেশন ত্রুটি বা ইঞ্জিনের সমস্যার কারণে ১০ জন নাবিক (একজন মহিলা সহ) নিয়ে দুটি মার্কিন নৌবাহিনীর নৌকা ফারসি দ্বীপের কাছে অনিচ্ছাকৃতভাবে ইরানের জলসীমায় প্রবেশ করে। ইরানি বিপ্লবী গার্ড কর্পস (IRGC) বন্দুকের মুখে নাবিকদের আটক করে এবং ফুটেজ প্রচার করে যেখানে তাদের মাথায় হাত রেখে এবং একজন নাবিককে ক্ষমা চাইতে দেখা যাচ্ছে।
আরো উল্লেখ করা হয়েছে; ইরান দাবি করেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্ষমা চেয়েছে এবং ঘটনার পুনরাবৃত্তি না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে পেন্টাগন এবং পররাষ্ট্র দপ্তর ক্ষমা চাওয়ার ভিডিওর প্রেক্ষাপট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং জানিয়েছে যে এটি চাপের মুখে তৈরি করা হতে পারে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের কাছে ক্ষমা চয়নি।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সার্চ করে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম 'CBS News'-এর ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত আরো একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনেও আলোচ্য ভিডিওর বিষয়ে একই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওর স্থিরচিত্রের সাথে (বামে) সিএনএন’-এর ওয়েবসাইটে পাওয়া ভিডিওর (ডানে) পাশাপাশি মিল দেখুন--
অর্থাৎ আলোচ্য ভিডিওটি ৯ বছর আগে ২০১৬ সালে ইরানে নাবিক (সৈন্য) সহ দুটি মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজ আটকের। সম্প্রতি ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের হাতে মার্কিন জাহাজ আটকের ঘটনার নয়।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে ৯ বছর আগে ইরানের জলসীমায় প্রবেশ করায় ইরানের হাতে আটক হওয়া মার্কিন জাহাজ আটক হওয়ার ভিডিওকে সম্প্রতি ইয়েমেনের হুতিদের হাতে মার্কিন জাহাজ আটক হওয়ার বলে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।