সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, ভিডিওটি চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের সন্ধান পাওয়ায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর অভিযান চালানোর সময়ে ধারণ করা হয়েছে। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর 'Political Plus' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে ভিডিওটি শেয়ার করে বলা হয়, "এই মুহূর্তে পাকিস্তান থেকে আনা বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের সন্ধানে হাটহাজারী মাদ্রাসায় পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর অভিযান চলছে,, রাজধানীতে বিপুল পরিমাণ পাকিস্তানের অস্ত্র বিভিন্ন মাদ্রাসায় এসেছে,,, বতর্মান দেশ জঙ্গিদের হাতে চলে গেছে,,, #Bangladesh #Dhaka #news…"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য ভিডিওটি সাম্প্রতিক নয়, হাটহাজারী মাদ্রাসায়ও ধারণ করা হয়নি। ২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভরতদের ধাওয়া দেয় পুলিশ। আলোচ্য ভিডিওটি বিক্ষোভরতদেরকে পুলিশের ধাওয়া দেওয়ার সময়ে ধারণ করা হয়।
আলোচ্য ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম কেটে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে 'nutshell_today' নামে একটি ইন্সটাগ্রাম একাউন্ট থেকে ২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর করা পোস্টে আলোচ্য ভিডিওটির মত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ইন্সটাগ্রাম পোস্টে বলা হয়, ""বাংলাদেশের জনগন" ব্যানারে ঢাকার কাওরান বাজারে প্রথম আলো অফিসের সামনে একটি গরু জবাই করে বিক্ষোভ করে একদল বিক্ষোভকারী। রবিবার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভটি প্রথম আলো এবং দ্য ডেইলি স্টারের কাছ থেকে ভারতীয় আগ্রাসনে সহায়তার অভিযোগ এনে তওবা দাবি করার জন্য সংগঠিত হয়েছিল। বিক্ষোভকারীরা দাবি করেছেন যে প্রথম আলো এবং দ্য ডেইলি স্টার ভারতীয় আগ্রাসনের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে এবং শাহবাগ আন্দোলনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আখ্যান তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। বিভিন্ন মাদ্রাসা এবং ইসলামী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী সহ অংশগ্রহণকারীরা প্রথম আলো অফিসের সামনের এলাকা দখল করে প্ল্যাকার্ড এবং স্লোগান ধরেছিল। সন্ধ্যা ৬:৩০ টার দিকে বিক্ষোভকারী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস এবং সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে। (অনূদিত)"। ইন্সটাগ্রাম পোস্টটি দেখুন--
আরো সার্চ করে 'RS Multimedia' নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর "প্রথম আলোর অফিসের সামনে বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের সং#ঘ#র্ষ" শিরোনামে প্রচারিত আরেকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। আলোচ্য ভিডিওটির সাথে উক্ত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন--
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর "Attempt to create chaos in front of Prothom Alo office, joint force disperses troublemakers" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, "রবিবার সারাদিন ধরে নগরীর কারওয়ান বাজার এলাকায় প্রথম আলো অফিসের সামনের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে একদল লোক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে। এর ফলে ঢাকার বৃহত্তম কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারে যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বারবার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার অনুরোধ করে। পরে, সন্ধ্যায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীরা আরও উত্তেজিত হয়ে উঠলে, পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে এবং শব্দ গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। আজ দুপুর ১২:০০ টার দিকে ১৫-২০ জনের একটি দল প্রথম আলো অফিসের সামনে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে, পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আবারও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীরা দুপুর আড়াইটার দিকে প্রথম আলো অফিসের সামনে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করে এবং পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তিতে লিপ্ত হয়। (অনূদিত)"। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও অনলাইন পোর্টাল ঢাকা পোস্ট, জাগো নিউজ এবং বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও জানা যায় একই তথ্য।
অর্থাৎ আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য ভিডিওটি চট্টগ্রামের হাটহাজারি মাদ্রাসায় অস্ত্র উদ্ধারের কোনো ঘটনায় ধারণ করা হয়নি। মূলত ২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোর কার্যালয়ের সামনে একদল বিক্ষোভকারীর সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আলোচ্য ভিডিওটি ওই সময়ে ধারণ করা হয়।
সুতরাং প্রথম আলোর কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের সময়ে ধারণকৃত পুরোনো ঘটনার ভিডিওকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় অস্ত্র উদ্ধারের সময়কার বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।