সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকের হাসপাতালে ভর্তি থাকার একটি ছবি শেয়ার করে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৯ মে 'Shahazadi Akhtar Sarkar' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের হাসপাতালে ভর্তি থাকার একটি ছবি পোস্ট করে বলা হয়, "হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ভারতের মাদ্রাজ হাসাপাতালে ভর্তি হয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলের সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। তাকে ২৪ ঘন্টার নিবির পর্যবেক্ষণে রেখেছেন হাসপাতালের চিকিৎসক। গত রাতে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাদ্রাজ হাসাপাতালে ভর্তি হন........। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ আওয়ামী লীগের অন্যতম সিনিয়র সদস্য তোফায়েল আহমেদ এখন আবার জাহাঙ্গীর কবির নানক একে একে সিনিয়র শূন্য হয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এটা আওয়ামী লীগের জন্য বড় শূন্যতা।সবাই তাদের জন্য দোয়া করবেন আল্লাহ তা'আলা যেন তাদেরকে সুস্থতার শহীত নেক হায়াত দান করেন।" ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য ছবিটি পুরনো। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন জাহাঙ্গীর কবীর নানক। হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় ওই সময়ে আওয়ামী লীগ এই নেতার আলোচ্য ছবিটি ধারণ করা হয়।
ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে অনলাইন পোর্টাল জাগো নিউজের ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ৬ জানুয়ারি "Nanak suffers heart attack" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচ্য ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, "Awami League presidium member Advocate Jahangir Kabir Nanak suffered a heart attack on Monday morning. He was admitted to the Labaid Cardiac Hospital in the capital and later shifted to the Coronary Care Unit (CCU) of the hospital. His personal assistant Biplob said Nanak felt chest pain after awakening from sleep in the morning. Later, he was admitted to the Labaid Cardiac Hospital where doctors conducted an angiogram and found two blockages in his heart. Nanak was kept at CCU after implanting a ring on this heart, Biplob added. (সোমবার সকালে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তাকে রাজধানীর ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং পরে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। তার ব্যক্তিগত সহকারী বিপ্লব জানান, সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর নানক বুকে ব্যথা অনুভব করেন। পরে তাকে ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় যেখানে ডাক্তাররা এনজিওগ্রাম করেন এবং তার হৃদপিণ্ডে দুটি ব্লকেজ দেখতে পান। এই হৃদপিণ্ডে একটি রিং লাগানোর পর নানককে সিসিইউতে রাখা হয়।)"। স্ক্রিনশট দেখুন--
ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে অনলাইন পোর্টাল বাংলা নিউজ টোয়েন্টিফোরের ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ৬ জানুয়ারি "জাহাঙ্গীর কবির নানক হাসপাতালে" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচ্য ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, "সোমবার (০৬ জানুয়ারি) দুপুরে বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তার ব্যক্তিগত সহকারী মাসুদুর রহমান বিপ্লব। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বুকে ব্যথা অনুভব করলে তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখানে এনজিওগ্রাম করে তার হার্টে দুইটি ব্লক পাওয়া যায়। এরমধ্যে একটিতে ইতোমধ্যে রিং পরানো হয়েছে। বাকি ব্লকে রিং না পরালেও চলবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।"। স্ক্রিনশট দেখুন--
পরবর্তীতে আরো সার্চ করে ঢাকা ট্রিবিউন এবং রাইজিং বিডির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও আলোচ্য ছবিটি একই তথ্যসহ খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়াও, একই দিনে জাহাঙ্গীর কবীর নানকের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংবাদ প্রচার করে কালের কণ্ঠ এবং প্রথম আলো।
অর্থাৎ, জাহাঙ্গীর কবীর নানকের নানকের আলোচ্য ছবিটি ৫ বছর আগের। ২০২০ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশের ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি হলে জাহাঙ্গীর কবীর নানকের এই ছবিটি ধারণ করা হয়, এটি সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে ভারতের কোনো হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ছবি নয়। তবে আওয়ামী লীগের এই পলাতক নেতা বর্তমানে অসুস্থ কিনা তা স্বাধীনভাবে যাচাই করে দেখেনি বুম বাংলাদেশ।
সুতরাং জাহাঙ্গীর কবীর নানকের ৫ বছর আগে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ছবিকে সাম্প্রতিক দাবি করে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে যা বিভ্রান্তিকর।