সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, মোবাইল চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ায় এক ব্যক্তিকে ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া হয়। এরকম দুটি পোস্ট দেখুন এখানে ও এখানে।
গত ১৮ মে 'Chitra Express - চিত্রা এক্সপ্রেস' নাম একটি ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হয়, "ছিনতাই করে পালিয়ে যাওয়ার সময় হাতে নাতে ধরা তখন চোরের শেষ পরিণতি কি হয় দেখুন 🥹"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। গত ১৮ মে বগুড়ায় এক ব্যক্তিকে বিদেশে পাঠানো ও চাকরি দেওয়া নিয়ে ঝামেলাকে কেন্দ্র করে মতিউর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া হয়। আলোচ্য ভিডিওটি সেসময়ে ধারণ করা হয়।
আলোচ্য ভিডিওটির ব্যাপারে জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গত ২০ মে দৈনিক পত্রিকা যুগান্তরের ইউটিউব চ্যানেলে "বেঁচে আছে চলন্ত ট্রেন থেকে ফে-লে দেওয়া সেই ব্যক্তি , কী ঘটেছিল সেদিন ? | Naogaon Motiur | Jugantor" শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদনে আলোচ্য ভিডিওটির মত হুবহু একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটি থেকে জানা যায়, চলন্ত ট্রেনে ঝুলে থাকা ওই ব্যক্তির নাম মতিউর রহমান। ভিসা সংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে ঝামেলার জেরে ওই ব্যক্তিকে ট্রেন থেকে ফেলে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন--
আরো কি-ওয়ার্ড সার্চ করে যুগান্তরের অনলাইন ভার্সনে গত ২০ মে "চলন্ত ট্রেনের দরজার বাইরে ঝুলে ছিলেন ৫ মিনিট, নেপথ্যে যা জানা গেল" শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, "বিদেশ লোক পাঠানোর পর কাগজপত্র দিতে দেরি হওয়ার জের ধরে গত রোববার বগুড়া থেকে ছেড়ে আসা সান্তাহারগামী কমিউটার ট্রেনে চলন্ত অবস্থায় কয়েকজন যুবক দুপুর ১টার দিকে মোবাইল ফোন চোর ও ছিনতাইকারী আখ্যা দিয়ে মতিউরকে আদমদিঘী উপজেলার নসরতপুর স্টেশন এলাকায় ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার ৩৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ও কয়েক সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, ট্রেনের দরজার বাইরে ঝুলছেন মতিউর রহমান; কিন্তু ট্রেনের ভেতর থেকে কেউ তার হাত ধরে রেখেছিল। প্রাণে বাঁচার জন্য আর্তনাদ করছিলেন লোকটি। এক সময় ভেতর থেকে লোকটির হাত ছেড়ে দিলে তাকে রেললাইনে পড়ে যেতে দেখা যায়। মতিউর রহমান বগুড়ায় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে বাড়িতে আছেন।" স্ক্রিনশট দেখুন--
পরবর্তীতে আরো কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সনে গত ২০ মে "চলন্ত ট্রেন থেকে একজনকে ফেলে দেওয়ার ভাইরাল ভিডিও নিয়ে যা জানা গেল" শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনেও বলা হয়, "পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মতিউর রহমান একজন আদম ব্যবসায়ী। তাঁর মাধ্যমে দুই বছর আগে সজীব নামের এক যুবক সৌদি আরবে যান। কিন্তু সৌদি আরবে যাওয়ার পর কাগজপত্রে সমস্যা থাকায় ইকামা (কাজের সুপারিশ সনদ) না পাওয়ায় সজীবের পরিবারের সঙ্গে মতিউর রহমানের বিরোধ চলছিল। ওই বিরোধের জেরে সজীবের নির্দেশে কয়েকজন যুবক গতকাল মতিউর রহমানকে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন।" স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও দৈনিক পত্রিকা সমকাল ও ঢাকা ট্রিবিউনের অনলাইন ভার্সন, অনলাইন পোর্টাল বাংলানিউজ ২৪, ঢাকা পোস্ট এবং জাগো নিউজের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও জানা যায় একই তথ্য।
অর্থাৎ আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। মোবাইল চুরি করতে গিয়ে ধরায় পড়ায় নয় বরং পূর্বশত্রুতার জেরে আলোচ্য ভিডিওর ব্যক্তিকে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়।
সুতরাং পূর্বশত্রুতার জেরে এক ব্যক্তিকে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে হত্যাচেষ্টার ভিডিওকে মোবাইল চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ার ভিডিও বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।