সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়েছে, কক্সবাজারের টেকনাফে সম্প্রতি একজন হুজুরের দুই হাতের কব্জি কেটে দিয়েছে জামাত-শিবিরের লোকজন। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে ও এখানে। এছাড়াও সাম্প্রতিক ঘটনা হিসেবে উপস্থাপিত এই ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে আরেক রাজনৈতিক দল বিএনপির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দেখুন এখানে ও এখানে।
গত ২৬শে মে ‘Mohammad Sohel Islam Qaderi’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, “টেকনাফে সিদ্দিক হুজুরের দুই হাতের কব্জি কেটে দিয়েছে জামাত-শিবিরের লোকজন”। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি বিভ্রান্তিকর। আলোচ্য ভিডিওটি ২০২২ সালের কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার একটি ঘটনার। ঘটনার কারণ হিসেবে গণমাধ্যমে পূর্ব শত্রুতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও অভিযুক্ত ব্যক্তির নির্দিষ্ট করে কোনো দলীয় পরিচয় বা এ ঘটনার রাজনৈতিক কারণ জানা যায়নি। তবে আক্রান্ত ব্যক্তি স্থানীয় বিএনপি নেতা এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ইয়াবা কারবারি বলে গণমাধ্যমের সূত্রে জানা গেছে।
আলোচ্য ভিডিও থেকে কি-ফ্রেম নিয়ে ছবি রিভার্স ইমেজ সার্চ এর মাধ্যমে ফেসবুকে ‘Naf tv’ নামক ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের ২৬ নভেম্বর প্রকাশিত ১৬:৪২ মিনিটের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। প্রাপ্ত পূর্ণ সংস্করণের ভিডিওটির সাথে আলোচ্য প্রচারিত ৪১ সেকেন্ডের ভিডিওটির হুবহু মিল পাওয়া যায় (শুরুর দিকের অংশের)। এতে উল্লেখ করা হয়, টেকনাফে নাজির পাড়ার ছিদ্দিকের দুহাতের কবজি কেটে নিয়েছে প্রতিপক্ষ। ভিডিওটির স্ক্রিনশট দেখুন--
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সার্চ করে অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা পোস্টের ২০২২ সালের ২৬ নভেম্বর "বিএনপি নেতার দুই হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করল সন্ত্রাসীরা" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
এতে উল্লেখ করা হয়, "টেকনাফে কুপিয়ে সিদ্দিক আহম্মদ নামে এক বিএনপি নেতার দুই হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে ইয়াবা কারবারিরা। আহত ছিদ্দিক উপজেলা বিএনপির সহ-ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক।"
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, “পূর্ব শত্রুতার জেরে স্থানীয় ইউপি সদস্য এনামুল হকসহ একদল সন্ত্রাসীরা দা, লম্বা কিরিচসহ অস্ত্র নিয়ে ছিদ্দিককে গাড়ি থেকে নামিয়ে হামলা চালায়। হামলাকারী ইউপি সদস্য এনাম আত্মসমর্পণ করা ইয়াবা কারবারি। তিনিসহ ১০১ জন ইয়াবা কারবারিরও সাজা হয়েছে। সাজা হলেও তিনি পলাতক। বেপরোয়া এনাম মেম্বারের নিয়মিত ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে। ইয়াবা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল তিনি বিভিন্ন সময় এই ধরণের হামলার অভিযোগ রয়েছে।” প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট কোলাজ দেখুন--
ঢাকা পোস্ট ছাড়াও আরো দুইটি (১, ২) সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনেও একই তথ্য পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদন দুটিতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আত্মস্বীকৃত ইয়াবা কারবারি এনাম মেম্বারের বড় ভাই আজিজুল হক মার্কিনকে বাড়িতে ঢুকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় আহত সিদ্দিককে প্রধান ও তার আত্মীয়স্বজনদের আসামি করে মামলা করে নিহতের পরিবার। এ মামলার পর থেকে সিদ্দিক এলাকা ছেড়ে কক্সবাজার শহরে চলে আসেন।
২৬ নভেম্বর সিদ্দিক আহম্মদ টেকনাফে সাবরাংয়ে তার অসুস্থ মেয়েকে দেখতে যান। পরে মোটরসাইকেলে ফেরার পথে নাজির পাড়া মাদ্রাসার সামনে ব্যারিকেড দিয়ে এনামুল হকের নেতৃত্বে ১০-১৫ জনের একটি দল সিদ্দিককে গাড়ি থেকে নামিয়ে ফেলে। পরে এনাম মেম্বারের আস্তানায় নিয়ে তার দুই হাতের কবজি কেটে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। [যদিও গণমাধ্যম তিনটির প্রতিবেদনের তথ্যগুলো আলাদা করে যাচাই করা হয়নি]
অর্থাৎ আলোচ্য ভিডিওটি ২০২২ সালের একটি ঘটনার। ঘটনার কারণ হিসেবে গণমাধ্যমে পূর্ব শত্রুতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অপরদিকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নির্দিষ্ট করে কোনো দলীয় পরিচয় বা এই ঘটনার রাজনৈতিক কারণ গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে ২০২২ সালের একটি ঘটনার ভিডিওকে সাম্প্রতিক ঘটনা হিসেবে বিভ্রান্তিকর তথ্যসহ প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।