সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করে বলা হচ্ছে; শহিদুল আলম গাজায় পৌঁছে খাবার বিতরণ করছেন। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ০৩ অক্টোবর ‘মোঃ খোরশেদ আলম’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিটি পোস্ট করা হয়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, “আলহামদুলিল্লাহ গাজায় এক টুকরো বাংলাদেশ। শহিদুল আলম ভাই গাজায় অবস্থান করছেন”। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ছবিটি বাস্তব নয়। এই ছবিটি বাস্তবে ধারণ করা কোনো স্থিরচিত্রের নয় বরং এআই প্রযুক্তির সহায়তায় আলোচ্য ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
সার্চ করে আলোচ্য ছবিটির বিষয়ে গ্রহণযোগ্য কোনো মাধ্যমে ছবিটির বিষয়ে কোনো উল্লেখযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। ফলে ছবিটির এআই হওয়ার বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে ছবিটিতে কিছু অসঙ্গতি পাওয়া যায়। কয়েকজনের চেহারা আংশিক বিকৃত বা অস্বাভাবিক দেখা যাচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক মাধ্যমে গুগলের জেনারেটিভ টুল জেমিনি দিয়ে ছবি তৈরি করে প্রচারের প্রবণতা অনেক বেড়েছে। জেমিনির ২.৫ ফ্ল্যাশ (ছবির ক্ষেত্রে ন্যানো ব্যানানা বলা হয়) মডেল আগের চেয়েও বেশি বাস্তবের ন্যায় ছবি তৈরি করতে সক্ষম। Nano Banana হলো গুগল-এর Gemini 2.5 Flash Image মডেলটির কোডনেম (আভ্যন্তরীণ ডাকনাম)। এই মডেলটি মূলত একটি উন্নত এআই ইমেজ এডিটিং মডেল যা টেক্সট কমান্ড বা বর্ণনা ব্যবহার করে ছবি তৈরি এবং সম্পাদনা করতে পারে।
জেমিনি দিয়ে তৈরি কিনা নিশ্চিত হতে গুগলেরই SynthID নামক ডিটেকশন টুলে ছবিটিকে যাচাই করা হয়েছে। কেননা গুগলের জেনারেটিভ টুলগুলো তাদের ইমেজ কন্টেন্টে সাধারণ ওয়াটারমার্কিংয়ের পাশাপাশি 'SynthID' নামক এক ধরণের ওয়াটারমার্কিং ব্যবহার করে যা খালি চোখে শনাক্ত করা যায়না। তবে গুগলের SynthID ডিটেকশন টুল সেটি শনাক্ত করতে পারে।
এই প্রক্রিয়ায় যাচাই করলেও টুলটি আলোচ্য ছবিটি 'গুগলের এআই ইমেজ জেনারেটিভ মডেল ব্যবহার করে তৈরি' বলে ফলাফল দিয়েছে এবং ছবিতে SynthID শনাক্ত করেছে। দেখুন--
অর্থাৎ ছবিটি এআই প্রযুক্তিতে তৈরি।
উল্লেখ্য ছবিটি প্রচারের দুইদিন পরে ০৫ অক্টোবর প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শহিদুল আলম গাজা অভিমুখে থাকা কনশানস নৌযানে আছেন। কনশানস হলো আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি)’ ও ‘থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা (টিএমটিজি)’ নৌবহরের একটি জাহাজ।
আরো উল্লেখ করা হয়, ফিলিস্তিনের গাজায় ০৫ অক্টোবর, রোববার পৌঁছানোর কথা থাকলেও আরও দেরি হবে বলে আগেই জানিয়েছেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। এই উদ্যোগ কর্তৃপক্ষের ইউটিউব লাইভ ও লাইভ ট্র্যাকার সাইটেও তেমনটাই দেখা গেছে প্রতিবেদন লেখার সময়ে।
গত ০৬ অক্টোবর "গাজা অভিমুখী জাহাজে কেমন দিন কাটছে, জানালেন শহিদুল আলম" শিরোনামে প্রথম আলোতে প্রকাশিত আরো একটি লেখা থেকেও বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে এআই প্রযুক্তিতে তৈরি ছবিকে বাস্তবে ধারণ করা ছবি হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।