সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি ও পেজ থেকে সম্প্রতি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল (আইসিটি) কর্তৃক গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত সেনা কর্মকর্তাদেরকে পুলিশ হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দাবিতে একটি ছবি পোস্ট করা হচ্ছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১১ অক্টোবর 'MD. Raiz Ahmed Manna' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ছবিটি পোস্ট করে উল্লেখ্য করা হয়, “৩০ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করে, ২লক্ষের ও অধিক মা-বোনকে ধর্ষণ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন সদস্যেরও কোন বিচার হয়নি। বিচার হয়নি পাকিস্তান বাহিনীর জেনোসাইড এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে সহযোগী জামায়াতে ইসলামীর। এই আজন্ম পাপের বোঝা..... দেশবিরোধী জ'ঙ্গিদের ক্ষমতায় বসিয়েছেন না? ২৪ জন বাংলাদেশি আর্মী অফিসারকে দেশের মাটিতেই মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সিনিয়র অফিসারদের বিরুদ্ধে যে সাজানো অভিযোগ, ভাবছেন আমার কী? আমি জুনিয়র অফিসার তো বেঁচে গেলাম! অপেক্ষা করেন পানি নাক পর্যন্ত উঠুক। আপনার সিরিয়ালও আসছে...।” নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ছবিটি বাস্তব নয়। অর্থাৎ ছবিটি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল (আইসিটি) কর্তৃক গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত সেনা কর্মকর্তাদেরকে পুলিশ হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যের নয় বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটি তৈরি করা হয়েছে।
আলোচ্য ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে গ্রহণযোগ্য কোনো মাধ্যমে দাবি অনুযায়ী ছবিটি বাস্তব হওয়ার বিষয়ে কিংবা ছবির বিষয়েও উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেনা সদস্যদের অস্বাভাবিকভাবে একরকম উচ্চতা ও ভঙ্গিতে সাজানো, যা বাস্তবে সচরাচর দেখা যায় না। পুরো ছবিজুড়ে আলোর প্রতিফলন ও রঙের ভারসাম্য অস্বাভাবিকভাবে সমান, যেন নিখুঁতভাবে সম্পাদিত। কিছু হাত ও আঙুলের গঠন বিকৃত বা অস্বাভাবিক, যা এআই ছবিতে সাধারণত পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া পটভূমি ও ফোকাসের গভীরতাও অস্বাভাবিকভাবে সমান, যা এটিকে বাস্তবের চেয়ে বেশি কৃত্রিম করে তুলেছে।
পাশাপাশি আলোচ্য ছবিটি এআই ব্যবহার করে তৈরি করা ছবির বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।
পরবর্তীতে, এআই ছবি শনাক্তের টুল 'হাইভ' ব্যবহার করে ছবিগুলো যাচাই করা হয়। টুলটি ছবিটিকে সম্ভাব্য এআই দ্বারা তৈরি ছবি হিসেবে ফলাফল প্রদান করেছে। ছবিটির ফলাফলের স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়া এআই ছবি শনাক্তের আরেক টুল 'সাইট ইন্জিন' ব্যবহার করেও ছবিটি যাচাই করা হয়। এই টুলটিও ছবিটিকে সম্ভাব্য এআই দ্বারা তৈরি ছবি হিসেবে ফলাফল প্রদান করেছে। ছবিটির ফলাফলের স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ আলোচ্য ছবিটি বাস্তব নয় বরং এটি এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ আমলের গুম, খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩২ জনকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল (আইসিটি)। তাঁদের মধ্যে ২৫ জনই সেনাবাহিনীর সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা। তার মধ্যে ১৫ জনকে হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনা সদর। তবে একজন এখনো লাপাত্তা। সেনাবাহিনীর দৃষ্টিতে, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ কর্মস্থলে ‘অবৈধভাবে’ অনুপস্থিত।
সুতরাং এআই প্রযুক্তিতে তৈরি ছবিকে আইসিটির গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের পুলিশ গ্রেফতার করে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।