সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি ও পেজ থেকে এক ব্যক্তিকে পুলিশের প্রকাশ্যে মারধরের একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, ভারতের পুলিশ একজন মুসলিমকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ৯ আগস্ট ‘Masjid Umar Ibnul Khattab’ নামক একটি পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করে উল্লেখ করা হয়, “আহ ভারতে মুসলিম হত্যা কতই না সহজ।” নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে আলোচ্য ভিডিওতে পুলিশের হাতে নির্যাতনের শিকার হওয়া ব্যক্তিটি মুসলিম নয় বরং ওই ব্যক্তির নাম বলবিন্দর কুমার ভাল্লা, তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যক্তি। এছাড়া ওই ব্যক্তির মারা যাওয়ার তথ্যটিও সঠিক নয়।
ভাইরাল ভিডিওটির কি ফ্রেম নিয়ে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করে “Caught on CCTV: 2 Punjab Police officers attack journalist on road, suspended” শিরোনামে ‘ইন্ডিয়া টুডে’ এর ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। গত ৯ আগস্ট ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে বলা হয়, পাঞ্জাবের বাটালায় বলবিন্দর কুমার ভাল্লা নামের একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিককে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে পাঞ্জাব পুলিশের দুই সাব-ইন্সপেক্টরকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনাটি ১ আগস্ট ঘটে এবং ফুটেজটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। স্ক্রিনশট দেখুন--
পাশাপাশি কি ওয়ার্ড সার্চ করে “'Repeatedly punched and kicked': 2 Punjab commandos assault journalist; suspended” শিরোনামে ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র ওয়েবসাইটে আরো একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ৭ আগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওর মিল পাওয়া যায়। যেই প্রতিবেদনে বলা হয়, পাঞ্জাবের বাতালায় দিনে-দুপুরে ব্যস্ত সড়কে এক সাংবাদিককে নৃশংসভাবে মারধরের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দুই পাঞ্জাব পুলিশ কমান্ডোর এই বর্বর হামলার দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ২ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, একজন পুলিশি পোশাকে এবং অপরজন সিভিল ড্রেসে থাকা দুই ব্যক্তি সাংবাদিক বালবিন্দর সিংকে বারবার ঘুষি ও লাথি মারছেন। পথচারীদের সামনেই এই হামলা চলে, তবে কেউ এগিয়ে এসে বাধা দেননি। স্ক্রিনশট দেখুন--
আলোচ্য প্রতিবেদনগুলোতে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তির পরিচয় হিসেবে গণমাধ্যমে বলবিন্দর কুমার ভাল্লা ও বলবিন্দর সিং হিসেবে উল্লেখ্য করা হয়েছে, নাম থেকেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তিনি মুসলিম ধর্মাবলম্বী নন বরং এটি হিন্দু গোত্রীয় নাম। যেখানে তিনি নির্যাতনে মারা গেছেন-এমন কোনো তথ্য উল্লেখ্য নেই।
অর্থাৎ পুলিশের নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিটির সঙ্গে মুসলিম ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই এবং তিনি নির্যাতনে মারাও যাননি।
সুতরাং ভারতে পুলিশের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে মুসলিম ব্যক্তি মারা গেছেন বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।