সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পদত্যাগ করেছেন। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৩ এপ্রিল 'News Bangla' নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট করে বলা হয়, "ব্রেকিং- বি এন পি মহাসচিব পদ ছেড়ে দিলেন মির্জা ফখরুল। বিস্তারিত কমেন্ট >>>"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পদত্যাগ করেননি বলে বুম বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবীর খান। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজও বিএনপির মহাসচিব হিসেবে ঠাকুরগাঁওয়ে জনসংযোগে অংশ নিয়েছেন বলে জানান শায়রুল কবীর।
আলোচ্য পোস্টটি পর্যবেক্ষণ করে পোস্টের কমেন্টসে পোস্টকারীর যুক্ত করা লিংকে গিয়ে 'internationalnew56' নামে একটি ওয়েবসাইটে গত ২৭ এপ্রিল "বি এন পি মহাসচিব পদ ছাড়লেন মির্জা ফখরুল ইসলাম" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, "বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির মহাসচিব পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, ব্যক্তিগত কারণ এবং দলের স্বার্থে তরুণ নেতৃত্বের সুযোগ দিতে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আজ এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, "দীর্ঘদিন ধরে দলের দায়িত্ব পালন করেছি। সময়ের দাবি অনুযায়ী নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজন। আমি বিশ্বাস করি, নতুন নেতৃত্ব বিএনপিকে আরো শক্তিশালী করে তুলবে।" দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অনুমোদনের পর মির্জা ফখরুল তার পদত্যাগপত্র জমা দেন। দলের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন মহাসচিবের নাম ঘোষণা করা হবে। দলের অনেক সিনিয়র নেতা তার অবদানের প্রশংসা করে বলেন, মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপি নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও ঐক্যবদ্ধ থেকেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও মনে করছেন, তার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে বিএনপিতে একটি বড় ধরনের নেতৃত্বের পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে। এদিকে, মির্জা ফখরুল ইসলাম ব্যক্তিগত জীবনে কিছু সময় কাটানোর পাশাপাশি ভবিষ্যতেও দলের জন্য কাজ চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। বিএনপির রাজনীতিতে এ সিদ্ধান্ত নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।"। স্ক্রিনশট দেখুন--
তবে, উক্ত ওয়েবসাইটটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ব্লগস্পট হিসেবে ব্যবহৃত ওই সাইটটিতে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে আলোচ্য পোস্টের (গত ২৩ এপ্রিল করা) দাবিটির সত্যতা জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বিএনপি মিডিয়া সেলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ২৯ এপ্রিল করা একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মহাসচিব হিসেবে উল্লেখ করে বলতে দেখা যায়, "জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে ক্ষমতা ও রাজনীতির দৃশ্যপট যেভাবে বদলেছে, সেখানে গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষার স্বর যেমন উচ্চকিত, তেমনি ‘অগণতান্ত্রিক শক্তি ও উগ্রপন্থার’ বিপদের কথাও বলছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপের প্রশংসা করলেও ‘মব’ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা ‘চরম ব্যর্থতা’ হিসেবে দেখছেন তিনি। এখনকার পরিস্থিতি অস্থিতিশীল মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে ‘সবকিছু সমাধান করা’ সম্ভব নয়। এ কারণে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়া ‘দরকার’। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিয়মিত আয়োজন ইনসাইড আউটে অংশ নিয়ে সমসমায়িক রাজনীতি, আগামী জাতীয় নির্বাচন, সংস্কার প্রক্রিয়া, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ইত্যাদি নানা বিষয়ে কথা বলেছেন দীর্ঘদিন মাঠের রাজনীতিতে বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়ে আসা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।" ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
পরবর্তীতে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পদত্যাগ করেছেন কি না জানতে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবীর খানের সাথে যোগাযোগ করে বুম বাংলাদেশ। আলোচ্য তথ্যটি বানোয়াট উল্লেখ করে তিনি জানান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আজও মহাসচিব হিসেবে ঠাকুরগাঁওয়ে এক জনসংযোগে অংশ নিয়েছেন।
এছাড়া বিএনপির মহাসচিবের মত গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিদায় নিলে তা গণমাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রচার হওয়ার কথা কিন্তু কি-ওয়ার্ড সার্চ করে কোনো গণমাধ্যমে কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো মাধ্যমে এ সংক্রান্ত কোনো খবর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পদত্যাগ করার তথ্যটি ভুয়া।
সুতরাং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের পদত্যাগ করার ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।