ফেক নিউজ

ভিডিওটি ভারতের অপমৃত্যুর ঘটনার, বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের নয়

বুম বাংলাদেশ দেখেছে, এটি ভারতের বিহারে তিন সন্তানকে হত্যা করে এক মায়ের আত্মহত্যার ঘটনার ভিডিও।

By - BOOM FACT Check Team | 17 Dec 2024 12:54 AM IST

ভিডিওটি ভারতের অপমৃত্যুর ঘটনার, বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের নয়

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি বাসায় তিনটি শিশু ও একজন নারীর নিথর দেহের ভিডিও পোস্ট করে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের ময়মনসিংহের একটি জায়গায় স্থানীয় কিছু লোক হিন্দুদের বাড়িতে গিয়ে হামলা, ধর্ষণ, ভাংচুর করেছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানেএখানে

গত ডিসেম্বর ‘Antor Nautiyal’ নামক অ্যাকাউন্ট থেকে এমন একটি ভিডিও পোস্ট করে লেখা হয়, “এটা আজকের ময়মনসিংহের- গীরিপুরের ঘটনা এলাকার স্থানীয় কিছু লোক হিন্দুদের বাড়িতে গিয়ে হামলা, ধর্ষণ, ভাংচুর করে।”। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--



ফ্যাক্ট চেক:

বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য ভিডিওটি বাংলাদেশের ময়মনসিংহে হিন্দু নির্যাতনের নয় বরং ভারতের বিহারে তিন সন্তানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে এক মায়ের আত্মহত্যার ঘটনার।

ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম নিয়ে ছবি রিভার্স ইমেজ সার্চ এর মাধ্যমে ফেসবুকে ‘Asad Raza Arn’ নামের একটি প্রোফাইলে গত ৮ নভেম্বর প্রকাশিত আলোচ্য ভিডিওটি সহ একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির বর্ণনায় উল্লিখিত তথ্যের বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়; এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ণিয়া জেলার পায়াজি পঞ্চায়েতের কিলপাড়া গ্রামে। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন-ি-



প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কি-ওয়ার্ড সার্চ এর মাধ্যমে ইউটিউবে ভারতের বিহারের স্থানীয় সংবাদ ভিত্তিক চ্যানেল ‘BC 24 News’-এ গত ৭ নভেম্বর প্রকাশিত আলোচ্য ভিডিওটি সহ একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ভিডিওটির শিরোনামের বঙ্গানুবাদ করলে দাঁড়ায়; একই পরিবারের মা ও তিন সন্তানের মৃত্যু, ঘটনাটি রাউতা পুলিশ স্টেশন এলাকার কিলপাড়া গ্রামের। ভিডিওটির স্ক্রিনশট দেখুন--



ভিডিও প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ঘটনাটি ঘটেছে রাউতা থানা এলাকার কিলপাড়া গ্রামে। ভিডিওতে মৃত শিশুদের আত্মহত্যা করা নারী ববিতা দেবীর সন্তান বলে শনাক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে এই ঘটনা তাদের বাবা রবি শর্মার অনুপস্থিতিতে ঘটেছে। চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শর্মা বলেছেন, “আমি একটি মন্দিরে মিটিং করতে গিয়েছিলাম। রাত ১০টার দিকে ফিরে আসার পর আমি ঘর খুলে দেখি চারটি মৃতদেহ ছাদ থেকে ঝুলছে।"

বুম পরবর্তীতে 'বিসি ২৪ নিউজ' এর প্রতিবেদক বাল কিশোরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনিও ঘটনাটি নিশ্চিত করেন। কিশোর বুমকে বলেন, “মৃতদেহের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর আমরা গ্রামে গিয়েছিলাম। আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি যে ঘটনাটি পূর্ণিয়ার কিলপাড়া গ্রামে হয়েছে।”

অর্থাৎ ভারতের বিহারে তিন সন্তানকে হত্যা করে এক নারীর আত্মহত্যার ঘটনার পরে তাদের বাড়িতে ভিডিওকে বাংলাদেশের ময়মনসিংহে হিন্দু নির্যাতনের বলে প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ঘটনাটি ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দৈনিক ভাস্কর, জাগরণ এবং নবভারত টাইমস-এ প্রকাশ করা হয়েছে। নবভারত টাইমস-এর রিপোর্টের উল্লেখ করা হয়েছে, "স্ত্রী প্রথমে তিন সন্তানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল। পরে সে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করে। চারটি লাশ ঘরের ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে।" রাউতা থানার পুলিশ কর্মকর্তা জ্ঞান রঞ্জনকে উদ্ধৃত করে সংবাদ মাধ্যমটি বলেছে, আত্মহত্যা করা নারী মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলেন এবং তার চিকিৎসা চলছিল।

সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে ভারতের বিহারে তিন সন্তানকে হত্যা করে এক নারীর আত্মহত্যার ঘটনার পর তাদের মরদেহের ভিডিওকে বাংলাদেশের ময়মনসিংহে হিন্দু নির্যাতনের বলে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর। 

Tags:

Related Stories