সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি লঞ্চে আগুন লাগার একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হচ্ছে, সম্প্রতি ময়ুর-৭ নামে সদরঘটের একটি লঞ্চে আগুন লাগে। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১৯ অক্টোবর 'MD Mohin Uddin' নামে একটি ফেসবুক পোস্টে ভিডিওটি শেয়ার করে বলা হয়, "ঢাকা সদরঘাটে লঞ্চে আগুন 🥲 Fire on launch at Sadarghat, Dhaka"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ দাবি করা হচ্ছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আগুন লাগার ধারাবাহিকতায় সদরঘাটে লঞ্চেও আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, সম্প্রতি সদরঘাটে লঞ্চে আগুন লাগার দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য ভিডিওটি সাম্প্রতিক নয় বরং ২০২৩ সালের ৩০ জুন রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ময়ূর-৭ লঞ্চে আগুন লাগে, ভিডিওটি সেসময়ে ধারণ করা হয়।
আলোচ্য ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম কেটে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ২০২৩ সালের ৩০ জুন বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম যমুনা টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে "সদরঘাটে ময়ূর-৭ লঞ্চে আগুন; নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ১২টি ইউনিট | Sadorghat Launch Fire" শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদনে আলোচ্য ভিডিওটির মত একটি দৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, "রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ময়ুর ৭ নামে একটি লঞ্চে আগুন লেগেছে।" ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন--
আরো সার্চ করে সংবাদ সংস্থা বিএসএস নিউজের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ৩০ জুন "সদরঘাটে ময়ূর-৭ লঞ্চের আগুন নিয়ন্ত্রণে" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচ্য ভিডিওটির মত একটি স্থিরচিত্র খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তরের ডিউটি অফিসার খালেদা ইয়াসমিনের বরাতে বাসস জানায়, ওইদিন বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঢাকা- টু চাঁদপুর রুটের ময়ুর-৭ নামক তিন তলা বিশিষ্ট একটি লঞ্চ বাধা ছিল। ওই লঞ্চটিতে কোন যাত্রী ছিল না। হঠাৎ করে লঞ্চটিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে সদরঘাট ফায়ার স্টেশন থেকে প্রথম দু'টি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে সূত্রাপুর থেকে ২টি, পোস্তগোলা থেকে ২টি, সদরঘাট নদীবন্দর থেকে ২টি এবং হেডকোয়াটার্স থেকে ৫টি ইউনিটসহ মোট ১৩টি ইউনিট এবং একটি ফায়ার সার্ভিস ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুপুর ১২টা ১০ মিনিটের সময় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়া দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলো এবং বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম একাত্তর টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিও প্রতিবেদন থেকেও আলোচ্য ভিডিওটি সম্পর্কে একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। এদিকে সম্প্রতি সদরঘাটে কোনো লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেনি বলেও গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন লঞ্চটির মাস্টার।
উল্লেখ্য সম্প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। যা নাশকতা বলে ধারণা করে সরকার তা খতিয়ে দেখার কথাও জানায়।
অর্থাৎ আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য ভিডিওটি সদরঘাটের কোনো লঞ্চে আগুন লাগার সাম্প্রতিক কোনো ঘটনায় নয় বরং এটি ২০২৩ সালের ৩০ জুন ময়ুর-৭ নামে একটি লঞ্চে আগুন লাগার ভিডিও।
সুতরাং ২০২৩ সালে লঞ্চে আগুন লাগার পুরোনো ভিডিও শেয়ার করে এটি সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।