সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি ও পেজ থেকে সম্প্রতি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সবকিছু পুড়ে গেছে দাবিতে একটি ছবি পোস্ট করা হচ্ছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১৯ অক্টোবর 'Md. Abu Sayed Al-khudr' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ছবিটি পোস্ট করে উল্লেখ করা হয়, “আহ্ কতো মানুষের স্বপ্ন পুড়ে ছাই!😥 অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতির পরিমাণ কোটি কোটি ডলারে! হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে, যা প্রায় একশ ২১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার সমান। এই ক্ষতি অনেক দেশের পুরো জিডিপির থেকেও বেশি।” নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, সম্প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও ছবিটি এই ঘটনার নয়। অর্থাৎ ছবিটি সম্প্রতি বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সবকিছু পুড়ে যাওয়ার দৃশ্য নয় এবং এটি বাস্তব কোনো ছবিও নয়। বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
আলোচ্য ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে গ্রহণযোগ্য কোনো মাধ্যমে দাবি অনুযায়ী ছবিটি বাস্তব হওয়ার বিষয়ে কিংবা ছবির বিষয়েও উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, আগুন ও ধোঁয়ার প্যাটার্ন অস্বাভাবিক এবং একই দিক মেনে চলে না। ভবন ও গাড়ির আকার–অনুপাত অসঙ্গত ও বিকৃত। দৃশ্যে মানুষের উপস্থিতি নেই, যা বাস্তব অগ্নিকাণ্ডে অসম্ভব। সামগ্রিকভাবে আলোর দিক ও বিস্তারিত অবাস্তব, যা এআই জেনারেশনের ইঙ্গিত বহন করে। পাশাপাশি আলোচ্য ছবিটিতে এআই ব্যবহার করে তৈরি করা ছবির বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।
পরবর্তীতে, এআই ছবি শনাক্তের টুল 'হাইভ' ব্যবহার করে ছবিগুলো যাচাই করা হয়। টুলটি ছবিটিকে সম্ভাব্য এআই দ্বারা তৈরি ছবি হিসেবে ফলাফল প্রদান করেছে। ছবিটির ফলাফলের স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়া এআই ছবি শনাক্তের আরেক টুল 'সাইট ইন্জিন' ব্যবহার করেও ছবিটি যাচাই করা হয়। এই টুলটিও ছবিটিকে সম্ভাব্য এআই দ্বারা তৈরি ছবি হিসেবে ফলাফল প্রদান করেছে। ছবিটির ফলাফলের স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ আলোচ্য ছবিটি বাস্তব নয় বরং এটি এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট এবং সিভিল এভিয়েশন ও বিমান বাহিনীর ফায়ার ইউনিউ যৌথভাবে কাজ করে প্রায় সাত ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
সুতরাং এআই প্রযুক্তিতে তৈরি ছবিকে সম্প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সবকিছু পুড়ে যাওয়ার দৃশ্য বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।