সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলছেন, "আজ ৫ আগস্ট, পুলিশ হত্যা দিবস উপলক্ষ্যে সকল শহীদ পুলিশ ভাইদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।" এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ০৫ আগস্ট ‘Hridoy H Shuvo’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টে উল্লেখ করা হয় "আজ ৫ ই আগষ্ট জাতীয় পুলিশ হত্যা দিবসে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। ইনশাআল্লাহ একদিন এটি বাস্তবে হবে।" পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। ভিডিওটি বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের বক্তব্যের নয় বরং এআই প্রযুক্তিতে এটি তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ এআই প্রযুক্তিতে তৈরি আইজিপি'র ভিডিওকে বাস্তবে তাঁর দেওয়া বক্তব্যের বলে প্রচার করা হচ্ছে।
আলোচ্য ভিডিও থেকে কি-ফ্রেম নিয়ে সার্চ করে এবং ভিডিওতে প্রচারিত দাবি (বক্তব্য) সরাসরি সার্চ করেও গণমাধ্যম সহ গ্রহণযোগ্য কোনো মাধ্যমেই আলোচ্য দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে কথার সাথে শরীর এবং হাতের মুভমেন্টে অসঙ্গতি দেখা যায়। এছাড়াও বাস্তব এমন দৃশ্যের অডিওর তুলনায় ভিডিওটিতে কথা বলার সাউন্ড কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সাধারণত গুগলের ভিও-৩ মডেল ব্যবহার করে তৈরি করা এআই ভিডিওতে অডিওর এমন উচ্চতর আউটপুট শোনা যায়।
গুগল 'Veo' হলো গুগলের একটি প্রায় বাস্তবসম্মত ভিডিও জেনারেশন টুল যা গুগল ডিপমাইন্ড দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। এটি টেক্সট-টু-ভিডিও জেনারেশন, ইমেজ-টু-ভিডিও জেনারেশন এবং সর্বশেষ সংস্করণ, ভিও-৩ ভিডিওর পাশাপাশি নেটিভ অডিও তৈরি করতে পারে।
এছাড়াও গুগলের জেনারেটিভ টুল তাদের কন্টেন্টে 'SynthID' নামক এক ধরণের ওয়াটারমার্কিং ব্যবহার করে যা খালি চোখে দেখা না গেলেও গুগলের SynthID ডিটেকশন টুল সেটি শনাক্ত করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় যাচাই করলে টুলটি আলোচ্য ভিডিওর অডিওকে 'গুগলের এআই টুল দিয়ে তৈরি' বলে ফলাফল দিয়েছে। দেখুন--
অডিওতে 'SynthID' শনাক্ত করলেও টুলটি ভিডিওতে 'SynthID' ধরতে পারেনি। সাধারণত একটি ভিও-জেনারেটেড ভিডিওর কোয়ালিটি বিভিন্ন কারণে স্বাভাবিকের তুলনায় কম হয়ে গেলে কিংবা সম্পাদনার কারণে কম্প্রেস হলে অনেক ক্ষেত্রেই 'SynthID' ওয়াটারমার্ক শনাক্ত করা কঠিন হয়ে যায় কিংবা শনাক্ত হয়না।
এছাড়াও বিষয়টি নিয়ে সার্চ করলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে পুলিশ সদর দপ্তরের এক বার্তা'র বরাতে ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি বলে সংবাদ পাওয়া যায়। দৈনিক আজকের পত্রিকার "আইজিপির ছবি ব্যবহার করে ভুয়া ভিডিও, পুলিশ সদর দপ্তরের সতর্কতা" শিরোনামের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, "বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের ছবি ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে একটি ভুয়া ভিডিও স্টেটমেন্ট প্রকাশ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার পুলিশ সদর দপ্তর একটি বার্তায় ভিডিওটির বিষয়ে সতর্ক করেছে।"
যদিও পুলিশ সদর দপ্তরের এক বার্তাটিতে আলোচ্য ভিডিওর কোনো স্ক্রিনশট ব্যবহার করা হয়নি। তবে সার্চ করে এই সময়ে আইজিপি বাহারুল আলমের আলোচ্য ভিডিওটি ব্যতীত আর কোনো এআই তৈরি ভিডিওর প্রচার দেখা যায়নি। ফলে বোঝা যায় আলোচ্য বার্তাটি এই ভিডিওকে কেন্দ্র করেই দেওয়া হয়েছে।
অর্থাৎ ভিডিওটি এআই প্রযুক্তিতে তৈরি।
উল্লেখ্য আলোচ্য ভিডিওটির স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চে আইজিপির একই ইউনিফর্ম পরিহিত এবং একই পারিপার্শ্বিক অবস্থার স্থিরচিত্র মূলধারার গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া যায়। ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর সময় টেলিভিশনের অনলাইন সংস্করণে "আইজিপির দায়িত্ব গ্রহণ করলেন বাহারুল আলম" শিরোনামে প্রকাশিত এই সংক্রান্ত খবরে আলোচ্য ছবিটি পাওয়া যায়। দেখুন--
এসব থেকে প্রতীয়মান হয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পূর্ববর্তী ছবি থেকে ভিডিওটি জেনারেট করে হয়েছে। গুগলের ভিও-৩ বা ভিও-৩ সেবাযুক্ত থার্ড পার্টি কোনো ভিডিও জেনারেটর ব্যবহার করে আলোচ্য ছবিটি দিয়ে ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অর্থাৎ পুলিশ প্রধানের আলোচ্য ভিডিওটি এআই জেনারেটেড।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে এআই প্রযুক্তিতে তৈরি আইজিপির বক্তব্যের ভিডিওকে বাস্তবে দেওয়া বক্তব্যের বলে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।