সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ফুটেজ শেয়ার করে বলা হচ্ছে, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নূরের উপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনারের কার্যালয়ে হামলা করেছে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৩০ আগস্ট 'Yousuf Uzzal Khan' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিওটি শেয়ার করে বলা হয়, "এই মুহূর্তে রাজধানীতে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নূরের উপর হামলার প্রতিবাদে ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে হামলা করেছে গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। মব সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি প্রশাসন।" স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর কাকরাইলে অবস্থিত প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালানো হয়। আলোচ্য ভিডিওটি ওই হামলার সময়ে ধারণ করা হয়। এছাড়াও, সম্প্রতি ডিএমপি কার্যালয়ে হামলা চালানোর কোনো সংবাদ গ্রহণযোগ্য কোনো মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আলোচ্য ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম কেটে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম এটিএন নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবর "প্রধান বিচারপতির বাসভবনে যেভাবে হা * ম * লা" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই ভিডিও প্রতিবেদনের ২৪ সেকেন্ড থেকে আলোচ্য ভিডিওটির মত দৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন--
আরো রিভার্স ইমেজ সার্চ করে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম মাছরাঙা টেলিভিশনের ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর করা একটি পোস্টে আলোচ্য ভিডিওটির মত দৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। ফেসবুক পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা থাকতে দেখা যায়, "পাখির চোখে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হা'ম'লা'র চিত্র"। ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম সময় টেলিভিশনের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর "প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, পুলিশ বক্সে আগুন (ভিডিও)" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, "রাজধানীর নয়া পল্টনে সমাবেশ উপলক্ষে কাকরাইলে আসা বিএনপি কর্মীরা প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ এবং বাসভবনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। এছাড়া কাকরাইল পুলিশ বক্সেও আগুন দিয়েছে তারা। শনিবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে এ হামলা চালানো হয়। এ ঘটনা পর কাকরাইল মোড়ে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে বিজিব মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদের সামনে কয়েকটি বাস ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। দুপুর ১২টার দিকে কয়েকজন কর্মী বৈশাখী পরিবহনের একটি গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। পরে গাজীপুর পরিবহনের আরেকটি বাসে ভাঙচুর চালায় আরও কয়েকজন।"। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ডিএমপির (ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ) পরিচালিত তাদের নিজস্ব অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘ডিএমপি নিউজ’-এ গত ৩০ আগস্ট "গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মী কর্তৃক ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে হামলার ভিডিওটি গুজব" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, "সম্প্রতি মোহাম্মদ শাহ আলম শিকদার নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে যে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কার্যালয়ে হামলা করেছে। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন গুজব। এ ধরনের কোনো ঘটনা প্রকৃতপক্ষে ঘটেনি। এই ধরনের মিথ্যা প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সর্বসাধারণকে অনুরোধ করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গুজব, যা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে ছড়ানো হয়েছে। এই গুজব ছড়ানোর ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।" স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ আলোচ্য পোস্টের ভিডিওটি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারের কার্যালয়ে হামলার নয়। ২০২৩ সালে বিচারপতির বাসভবনে হামলার সময়ে ধারণকৃত ভিডিওকে বিভ্রান্তিকর তথ্যসহ সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং বিচারপতির বাসভবনে হামলার দুই বছরের পুরোনো ভিডিওকে নূরের উপর হামলার প্রতিবাদে ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনার ভিডিও বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।