সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তিনটি ছবির কোলাজ সম্বলিত একটি পোস্ট করে বলা হচ্ছে; লিবিয়ায় কোরআন শরীফ অবমাননা করার কারণে এক ব্যক্তির মুখ কুকুরের মতো হয়ে গেছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৬ই ডিসেম্বর ‘Habibi tv Online’ নামক পেজ থেকে পোস্টটি করা হয়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, “কুরআন শরীফকে অপমান করার কারণে ৪১ দিনের মাথায় মুখ কুকুরের মত হয়ে গেছে ঘটনাটি ঘটছে লিবিয়াতে ......” (বানান অপরিবর্তিত)। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন —
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। আলোচিত ছবিগুলো একজন ব্যক্তির কুকুরের মতো হয়ে যাওয়ার কোনো ঘটনার নয় বরং ২০০৪ সালে ব্রাজিলের শিল্পী রড্রিগো ব্রাগার তৈরি ‘ফ্যান্টাসি অব কমপেনসেশন’ নামক একটি শিল্পকর্ম বা আর্টওয়ার্কের অংশ।
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ব্রাজিল ভিত্তিক ফটোগ্রাফি কেন্দ্রিক ক্রিয়েটিভ প্ল্যাটফর্ম ‘Olhave’-এ ২৫ মার্চ ২০০৮ সালে “Rodrigo Braga” নামক একজন শিল্পীর সাক্ষাতকার নিয়ে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ পাওয়া যায়। প্রবন্ধটিতে আলোচিত প্রচারিত ছবিগুলোর একটি ছবি পাওয়া গেছে।
এতে উল্লেখ করা হয়, শিল্পী রড্রিগো ব্রাগা ২০০৪ সালে ‘ফ্যান্টাসি অব কমপেনসেশন’ (Fantasy of Compensation) সিরিজের জন্য নিজের মুখে ডিজিটাল ম্যানিপুলেশন এবং প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে একটি কুকুরের মুখাবয়ব প্রতিস্থাপন করেন। এটি মূলত একটি প্রতীকী শিল্পকর্ম যেখানে শিল্পী নিজেকে একটি প্রাণীর সাথে একীভূত করার চেষ্টা করেছেন (অনূদিত ও সংক্ষেপিত)। নিবন্ধটির স্ক্রিনশট দেখুন —
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সার্চ করে শিল্পী রড্রিগো ব্রাগার নিজস্ব সাইটে প্রকাশিত আরো একটি নিবন্ধে (নিবন্ধের মধ্যকার কিছু ছবি অস্বস্তিকর হতে পারে) পাওয়া যায়। নিবন্ধটিতে উভয় ছবি সহ একই আর্টওয়ার্কের আরো বেশকিছু ছবি পাওয়া যায়।
এতে উল্লেখ করা হয়, ২০০৪ সালে তৈরি এই শিল্পকর্মে কোনো জীবিত প্রাণীকে কষ্ট দেওয়া হয়নি। মিউনিসিপ্যাল জুনোসিস কন্ট্রোল সেন্টারের অনুমতি নিয়ে একটি মৃত কুকুরের দেহাবশেষ সংগ্রহ করা হয় এবং একজন পশুচিকিৎসকের সহায়তায় অস্ত্রোপচার ও পরবর্তীকালে ডিজিটাল এডিটিংয়ের মাধ্যমে এই ছবিগুলো তৈরি করা হয়। শিল্পী তার কৈশোরের মানসিক যাতনা এবং প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্কের প্রতিফলন হিসেবে এই কাজটি করা হয়েছে (অনূদিত ও সংক্ষেপিত)। নিবন্ধটির প্রাসঙ্গিক স্ক্রিনশটের কোলাজ দেখুন —
শিল্পী রড্রিগো ব্রাগা এটি করার জন্য সরাসরি নিজের আসল মুখ ব্যবহার করেননি, বরং একটি নিজের মুখমণ্ডলের একটি হুবহু সিলিকন বা প্লাস্টিক ছাঁচ তথা প্রতিকৃতিতে এটি করেছিলেন। পরে একজন পশুচিকিৎসকের সহায়তায় সেই কৃত্রিম ছাঁচের ওপর মৃত কুকুরের মুখ, কান এবং চোখের চারপাশের চামড়া সেলাই করে জুড়ে দেওয়া হয়।
সবশেষে ছবি তোলার সময় এবং পরবর্তী এডিটিংয়ে (Digital Manipulation) এমনভাবে কাজ করা হয় যাতে মনে হয় শিল্পী নিজেই সেই কুকুরের মুখ ধারণ করে আছেন।
অর্থাৎ ছবিগুলো বাস্তবে কুকুরের মতো হয়ে যাওয়া কোনো মানুষের নয়, বরং একটি শৈল্পিক কাজের চিত্র।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে কোরআন অবমাননার কারণে ব্যক্তির মুখ কুকুরের মতো হয়েছে মর্মে কয়েকটি ছবি জুড়ে দিয়ে যে তথ্য প্রচার করা হয়েছে, সেই ছবিগুলো বাস্তব এমন কোনো ঘটনার নয়।




