সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি ও পেজ থেকে একজন ব্যক্তিকে মারধর করা হচ্ছে এমন একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, হিন্দু ব্যবসায়ীকে চাহিদা অনুযায়ী চাঁদা না দেয়ায় পিরোজপুরে ভয়াবহ নির্যাতন করছে স্থানীয় বিএনপির এক মুসলিম নেতা। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১৯ মে ‘Arya Sadhak’ নামক আইডি থেকে ভিডিওটি পোস্ট করে উল্লেখ করা হয়, “বাংলাদেশের পিরোজপুরে হিন্দু ব্যবসায়ীকে অমানুষি নির্যাতন করছে স্থানীয় মুসলিম বি এন পি নেতা। হিন্দু ব্যবসায়ীর অপরাধ ছিল চাহিদা অনুযায়ী চাঁদা না দেয়া। মা গো মা এই আর্তনাদ আজ সুশীল সমাজের কানে পৌঁছে না।” নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে আলোচ্য ভিডিওটি চাঁদা না দেয়ায় কোনো হিন্দু ব্যবসায়ীকে মারধরের নয় বরং এটি চুরির অভিযোগে একজন মুসলিম ব্যক্তিকে মারধরের ভিডিও।
ভাইরাল ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটির ৩ ও ৮ সেকেন্ডে দুটি দোকানের ব্যানার দেখতে পাওয়া যায়। যেখানে দেখা যায়, জায়গাটি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা।
এর সূত্র ধরে কি ওয়ার্ড সার্চ করে আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী সদস্য `SK Raju' নামক এক ব্যক্তির ফেসবুক প্রোফাইলে ৩০ এপ্রিল একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। যেই ভিডিওর সঙ্গে ভাইরাল দাবিতে পোস্টকৃত ভিডিওর সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। ভিডিওর ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়েছে, ফরিদপুর আলফাডাঙ্গা পৌরসভায় পুরাতন পরিবহন বাস কাউন্টারের পাশে আলমের দোকানে চুরি করতে গিয়ে হাতানাতে ধরা পড়েছে। ভিডিওটি দেখুন--
উল্লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে কি ওয়ার্ড সার্চ করে ‘Mehedi Hasan’ ফেসবুক আইডি থেকে একই জায়গার আরেকটি ভিডিও পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। যেই পোস্টে উল্লেখ্য করা হয়, ফরিদপুর আলফাডাঙ্গা পুরাতন পরিবহন বাস কাউনটারে পাশের আলম ভাইয়ে দোকানে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে. কিছু দিন আগেও চুরি সংক্রান্ত কয়েকটি জয়গায় তাকে দেখা যায়। পোস্টটি দেখুন--
হিন্দু ব্যবসায়ীকে চাঁদা না দেয়ায় মারধর দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর স্ক্রিনশট (বামে) এবং চুরির দায়ে একজন মুসলিম ব্যক্তিকে পিটুনির অরিজিনাল ভিডিওর স্ক্রিনশট (ডানে) দুটির মধ্যে সাদৃশ্য দেখুন পাশাপাশি--
মারধরের শিকার ব্যক্তিটি সম্পর্কে জানতে আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত শামীমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভিডিওতে মারধর করা ব্যক্তিটি হিন্দু নন। তার নাম মো. দ্বীন ইসলাম ঘরামী। তিনি একজন মুসলিম। দ্বীন ইসলাম বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আলম মিঞা নামক এক ব্যক্তির দোকান থেকে মোবাইল চুরি করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে। তখন দোকানের মালিক আলম মিঞা অভিযুক্ত দ্বীন ইসলামকে মারধর করেন।
অর্থাৎ ভাইরাল ভিডিওটি অতিরিক্ত চাঁদা না দেয়ায় পিরোজপুরে একজন হিন্দু ব্যবসায়ীকে মারধরের নয় বরং এটি চুরির অভিযোগে ফরিদপুরে একজন মুসলিম ব্যক্তিকে মারধরের ভিডিও।
সুতরাং চুরির অভিযোগে একজন মুসলিম ব্যক্তিকে মারধরের ভিডিওকে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।