HomeNo Image is Available
AuthorsNo Image is Available
Contact UsNo Image is Available
Correction PolicyNo Image is Available

Languages & Countries :






More about them

ফেক নিউজNo Image is Available
ফ্যাক্ট ফাইলNo Image is Available
শরীর স্বাস্থ্যNo Image is Available
HomeNo Image is Available
AuthorsNo Image is Available
Contact UsNo Image is Available
Correction PolicyNo Image is Available

Languages & Countries :






More about them

ফেক নিউজNo Image is Available
ফ্যাক্ট ফাইলNo Image is Available
শরীর স্বাস্থ্যNo Image is Available
ফেক নিউজ

জাপানি বিজ্ঞানী ওসুমি'র বরাতে রোজা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার

বুম বাংলাদেশ দেখেছে, রোজা নয় বরং অটোফেজি নিয়ে গবেষণায় নোবেল পেয়েছেন ইয়োশিনোরি ওসুমি এবং তিনি রোজা রাখার পরামর্শও দেননি।

By - Tausif Akbar | 31 March 2024 6:58 PM GMT

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট, পেজ এবং গ্রুপে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, রোজা নিয়ে গবেষণা করে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন জাপানি বিজ্ঞানী ইয়োশিনোরি ওসুমি। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে

গত ১৩ মার্চ 'Any News 360' নামের ফেসবুক পেজ থেকে একটি ভিডিও প্রতিবেদন পোস্ট করা হয়। পোস্টে বলা হয়, "রোজা নিয়ে গবেষণা করে নোবেল পুরষ্কার পেলেন জাপানের চিকিৎসা বিজ্ঞানী ইউসোনরি ওসুমি'। ভিডিও প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--



প্রতিবেদনে বলা হয়, "ইয়োশিনোরি ওসুমি তার গবেষণা প্রবন্ধে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন রোজা রাখলে ক্যান্সার সহ ডায়াবেটিস এমন ভয়াবহ রোগের ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়, সেজন্য তিনি ভালো স্বাস্থ্যর জন্য বছরে কমপক্ষে একমাস উপবাস থাকার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন সবাইকে"। ভিডিও প্রতিবেদনটির আরো একটি দৃশ্যের স্ক্রিনশট দেখুন--



এছাড়া আরো একটি পোস্টে বলা হয়, সপ্তাহে দুইদিন রোজা রাখেন ইয়োশিনোরি ওসুমি। এ সংক্রান্ত একটি পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন--



অর্থাৎ দাবি করা হয়েছে, ইয়োশিনোরি ওসুমি রোজা নিয়ে গবেষণা করে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন রোজা রাখলে ক্যান্সারের জীবানু মারা যায়, ডায়াবেটিস সহ ভয়াবহ রোগের ঝুঁকি কমে যায়। তাই তিনি নিজে সপ্তাহে দুইদিন রোজা রাখেন আর অন্যদের বছরে কমপক্ষে একমাস রোজা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।


ফ্যাক্ট চেক:

বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিগুলো সঠিক নয়। রোজা নয় বরং ইয়োশিনোরি ওসুমি ২০১৬ সালে অটোফেজি নিয়ে গবেষণায় নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। রোজা ও অটোফেজির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এছাড়াও তিনি ক্যান্সার নিরাময়ে রোজা রাখার পরামর্শ দেননি।

ইয়োশিনোরি ওসুমি'র নোবেল বিজয়ের বিষয়ে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে নোবেল পুরষ্কার (কমিটি) এর অফিশিয়াল সাইটে ২০১৬ সালে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রেস রিলিজটি পাওয়া যায়। এতে উল্লেখ করা হয়, "অটোফেজির প্রক্রিয়া আবিষ্কারের জন্য ২০১৬ সালে শারীরবিদ্যা বা মেডিসিনে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হয়েছেন ইয়োশিনোরি ওসুমি। অটোফেজি হল জীবদেহের কোষের উপাদান ক্ষয়প্রাপ্ত/ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে তা পুনর্ব্যবহারের জন্য মৌলিক প্রক্রিয়া। অটোফেজি শব্দটি গ্রীক শব্দ থেকে এসেছে। যার মধ্যে অটো অর্থ 'নিজে নিজে' এবং ফেজিন এর অর্থ 'খাওয়া'। সুতরাং অটোফেজি অর্থ 'নিজেকে নিজে খাওয়া', আত্ম ভক্ষণ বা নিজেকে খেয়ে ফেলা বোঝায়। অটোফেজির ধারণাটি ১৯৬০ এর দশকে আবির্ভাব হয়েছিল, যখন গবেষকরা প্রথম দেখেছিলেন জীবদেহের একটি কোষ ঝিল্লিতে নিজেকে আবদ্ধ করে নিজেকে নিজেই ধ্বংস করতে পারে এবং বস্তার মত একটি ভেসিকেল (আরেক ধরণের স্বচ্ছ ও ছোট কোষ) তৈরি করতে পারে যা লাইসোসোম ( কোষের আর্গানেল, যার এনজাইম কোষে থাকা বর্জ্য পদার্থ এবং সেলুলার ধ্বংসাবশেষ ভেঙে দেয়ার মাধ্যমে কোষের স্বাস্থ্য এবং কার্যকারিতা বজায় রাখে) নামের একটি জায়গায় স্থানান্তরিত হয় এবং নিজে নিজেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় (অনূদিত)। প্রেস রিলিজের স্ক্রিনশট দেখুন--



পাশাপাশি, রোজা ও অটোফেজির পার্থক্য নিয়ে কি-ওয়ার্ড সার্চ এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিষয়ক সাইট 'হেলথ লাইন'-এ "Autophagy: What You Need to Know" শিরোনামে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়। এতে বিভিন্ন চিকিৎসকের বরাতে উল্লেখ করা হয়, অটোফেজির আক্ষরিক অর্থ হল 'স্ব-ভোজন'। সুতরাং এটা বোঝা যায় যে বিরতিহীন উপবাস এবং কেটোজেনিক ডায়েট অটোফেজিকে ত্বরান্বিত করতে পারে। অটোফেজি ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে বিরতিহীন উপবাস বেশ কয়েকটি উপায়ের মধ্যে একটি কার্যকর উপায়। কেটোসিস নামক একটি ডায়েটের ফলে উপবাস করা ব্যতীত উপবাসের মতো একই সুবিধা পাওয়া যায়। ফলে কেটোসিস ডায়েটও অটোফেজিকে ত্বরান্বিত করতে পারে। ইনসুলিন লেভেল কমে গিয়ে এবং গ্লুকাগন লেভেল বেড়ে গিয়েও অটোফেজি শুরু হতে পারে। উপবাস বা ডায়েট (খাদ্য সংক্রান্ত বিষয়) ব্যতীত আরো একটি বিষয় যা অটোফেজি ত্বরান্বিত করতে ভূমিকা রাখতে পারে তা হল ব্যায়াম (অনূদিত ও সংক্ষেপিত)। এছাড়াও  'হেলথ লাইন' এর আরো একটি নিবন্ধে বলা হয়, একটি  গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল অটোফেজিকে উদ্দীপিত বা তরান্বিত করার ক্ষেত্রে- উপবাস রাখা, ক্যালোরি কাটানো বা কেটোজেনিক ডায়েট অনুসরণ করার প্রক্রিয়া সবার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে (অনূদিত ও সংক্ষেপিত)। হেলথ লাইন এর প্রথম নিবন্ধটির স্ক্রিনশট দেখুন--



অর্থাৎ অটোফেজি আর রোজা একই বিষয় নয়। অটোফেজি একটি সাধারণ শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। অটোফেজি ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে বিরতিহীন উপবাস, বিশেষ ডায়েট সহ আরো উপায় রয়েছে। খাদ্য সংক্রান্ত বিষয় ছাড়াও ব্যায়ামও অটোফেজি প্ররোচিত করতে ভূমিকা রাখতে পারে। আবার এই প্রক্রিয়াগুলো সবার ক্ষেত্রে উপযুক্ত না-ও হতে পারে।

এছাড়া, ইয়োশিনোরি ওসুমি যে বছর নোবেল পুরস্কার পান অর্থাৎ ২০১৬ সালে, তখন তাকে এবং তাঁর গবেষণার বিষয় অটোফেজি নিয়ে বাংলা সংবাদ মাধ্যম প্রথম আলো পত্রিকার অনলাইনে (নাগরিক সংস্করণে) বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদন থেকেও অটোফেজি নিয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।


ইয়োশিনোরি ওসুমি কি ক্যান্সার নিরাময়ে রোজা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন?

সংশ্লিষ্ট কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি'র একটি ফ্যাক্ট-চেক প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এতে বলা হয়, ওসুমির কর্মস্থল টোকিও ইন্সটিটিউটি অব টেকনোলজির জনসংযোগ কর্মকর্তা এএফপিকে জানিয়েছেন, রোজা রাখার ফলে ক্যান্সার নিরাময় হয়- এমন কোন মন্তব্য করেননি ইয়োশিনোরি ওসুমি (অনূদিত ও সংক্ষেপিত)। এছাড়াও ইয়োশিনোরি ওসুমি নিজেও রোজা রাখেন এমন দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়না।

অর্থাৎ ইয়োশিনোরি ওসুমি ক্যান্সার নিরাময়ে রোজা রাখার পরামর্শ দেননি।


রোজা রাখলে কি ক্যান্সার নিরাময় হয়?

এএফপি'র ফ্যাক্ট-চেক প্রতিবেদনটিতে কয়েকজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের বরাতে আরো বলা হয়, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের জন্য রোজা রাখার কোনো পরামর্শ দেয়া হয় না। ফ্রেঞ্চ ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চের অটোফেজির গবেষক লুসি জানিয়েছেন, একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অনাহার শরীর কোন অঙ্গের ক্ষতি করবে না এবং অটোফেজির সৌজন্যে বলা যায় এটি নেতিবাচক কিছু নয়। তবে এটি রোগ নিরাময় করে ফেলবে এটা বলাটা বিপদজনক। মন্টেপিলিয়ার ইউনিভার্সিটি হসপিটালের পুষ্টি বিশেষজ্ঞ লরেন্ট শিভেলার জানিয়েছেন, ক্যান্সারের রোগী দ্রুত অপুষ্টির শিকার হন। যখন কেউ অপুষ্টিতে থাকবেন তখন স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব লুভেইন এর অধ্যাপক পিয়েরে সনভক্স বলেন, ক্যান্সারের রোগীদের ডায়েট পরিবর্তন করা উচিত নয় (অনূদিত ও সংক্ষেপিত)।

কি-ওয়ার্ড সার্চে পাওয়া ভারতীয় ফ্যাক্ট-চেকি সংস্থা 'বুম লাইভ' এর একটি ফ্যাক্ট-চেক প্রতিবেদনে বলা হয়, অকার্যকর বা ডিসফাংশনাল অটোফেজি তো শরীরে ক্যান্সারের কারণও হয়ে উঠতে পারে। ইয়োশিনোরি ওসুমি'র গবেষণায় কোথাও বলা হয়নি 'রোজা ক্যান্সার সারাতে পারে' (সংক্ষেপিত)। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--



পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিষয়ক সাইট (তথ্য ও সংবাদ) 'মেডিকেল নিউজ টুডে' এর এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, অটোফেজি নিজেই সবসময় ইতিবাচক হয় না। অত্যধিক অটোফেজি হৃৎপিণ্ডের কোষগুলিকে মেরে ফেলতে পারে এবং এটি হার্টের সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই ক্যান্সারের চিকিৎসায় অটোফেজির ভূমিকার বিষয়টি জটিল। অনেক লোক অটোফেজির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার জন্য উপবাস এবং ক্যালোরি কাটানো সহ বিভিন্ন বিষয় পালন করে, তবে মানুষের উপর এর সুনির্দিষ্ট প্রভাব সম্পর্কে খুব বেশি প্রমাণ নেই (অনূদিত ও সংক্ষেপিত)। নিবন্ধটির স্ক্রিনশট দেখুন--



এছাড়াও বিরতিহীন উপবাস অটোফেজিকে ত্বরান্বিত করলেও, ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজ এবং ইউকে ডিমেনশিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মলিকুলার নিউরোজেনেটিক্স- ড. ডেভিড রুবিনস্টাইন এর বরাতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম 'বিবিসি'র ২০১৮ এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রক্রিয়ায় মানবদেহে উপকার প্রাপ্তির জন্য ঠিক কতক্ষণ উপবাস করতে হবে সেটা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি (অনূদিত ও সংক্ষেপিত)। 

অর্থাৎ নিবন্ধ সমুহ অনুযায়ী জীবদেহে ক্যান্সারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সরাসরি কেবল রোজা বা উপবাসের সুনির্দিষ্ট ইতিবাচক প্রভাব (ঔষধ ছাড়াই শুধু জীবনযাপন পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটিয়েই) বড় পরিসরে এখনও অপ্রমাণিত

সুতরাং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে 'রোজা নিয়ে গবেষণায় নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন ইয়োশিনোরি ওসুমি। এছাড়াও তিনি ক্যান্সার নিরাময়ে রোজা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন' মর্মে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে; তা বিভ্রান্তিকর।

Related Stories