সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করা হয়েছে। ছবিতে ডাকসুর সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক উমামা ফাতেমার পাশাপাশি অবস্থার একটি কথিত ছবি ব্যবহার করে তাদেরকে দম্পতি হিসেবেও উপস্থাপন করা হয়েছে। এ ধরনের দুটি পোস্ট দেখুন এখানে ও এখানে।
গত ১৫ ডিসেম্বর ‘Telent Kanti Das’ নামক প্রোফাইল থেকে এরকম একটি পোস্ট করা হয়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, “এই দম্পতি হাদির জন্য সুস্থতা কামনা করেছে।” (বানান অপরিবর্তিত)। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ছবিটি বাস্তব নয়। ডাকসুর সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক উমামা ফাতেমার পাশাপাশি দাঁড়ানো অবস্থার বলে প্রচারিত ছবিটি এআই প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। তাদের বিয়ের দাবিটিও ভিত্তিহীন।
শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে গ্রহণযোগ্য কোনো মাধ্যমে ছবিটির বিষয়ে কোনো উল্লেখযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। পর্যবেক্ষণে ছবিটিতে তাদের দুজনেরই, বিশেষ করে মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদের চেহারায় বাস্তব চেহারার সাথে কিছুটা অমিল পরিলক্ষিত হয়। ফলে ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি কিনা সে বিষয়ে যাচাই করার প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়। কারণ কিছুক্ষেত্রে এআই দিয়ে তৈরি ছবিতে এ ধরণের অসঙ্গতি পাওয়া যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে একের অধিক আলাদা আসল ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করে একই দৃশ্যে তাদের জুড়ে দেওয়ার উদাহরণ বৃদ্ধি পেয়েছে। নিখুঁত এবং সহজলভ্য হওয়ায় এই ধরণের সরাসরি বা ছবি থেকে ছবি তৈরির ক্ষেত্রে গুগলের জেনারেটিভ টুল 'জেমিনি (Gemini)' ব্যবহারের প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জেমিনির ২.৫ ফ্ল্যাশ বা তার চেয়ে উন্নত মডেলে (ছবির ক্ষেত্রে ন্যানো ব্যানানা বলা হয়) আগের চেয়েও বেশি বাস্তবের ন্যায় যে কোনো ধরণের ছবি তৈরি করতে সক্ষম।
ন্যানো ব্যানানা (Nano Banana) হলো গুগল-এর Gemini 2.5 Flash Image মডেলটির কোডনেম বা অভ্যন্তরীণ ডাকনাম। এই মডেলটি মূলত একটি উন্নত এআই ইমেজ এডিটিং মডেল যা টেক্সট কমান্ড বা বর্ণনা ব্যবহার করে ছবি তৈরি এবং সম্পাদনা করতে পারে। সর্বশেষ হালনাগাদে জেমিনির মডেলগুলোকে আরো উন্নত করা হয়েছে।
জেমিনি টুল দিয়ে তৈরি কিনা নিশ্চিত হতে গুগলেরই SynthID ডিটেকশন টুলে ছবিটিকে যাচাই করা হয়েছে। কেননা গুগলের জেনারেটিভ টুলগুলো তাদের ইমেজ কন্টেন্টে সাধারণ ওয়াটারমার্কিংয়ের পাশাপাশি 'SynthID' নামক এক ধরণের ওয়াটারমার্কিং ব্যবহার করে যা খালি চোখে শনাক্ত করা যায় না। তবে গুগলের SynthID ডিটেকশন টুল সেটি শনাক্ত করতে পারে।
এই শনাক্তকরণ টুলের মাধ্যমে ফেসবুকে প্রচারিত ছবিটি যাচাই করলে 'গুগলের এআই ইমেজ জেনারেটিভ মডেল ব্যবহার করা হয়েছে' বলে ফলাফল দিয়েছে এবং ছবিতে SynthID শনাক্ত করেছে। দেখুন--
অর্থাৎ ছবিটি গুগলের এআই মডেল ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সার্চ করে তাদের দুজনের বিয়ের তথ্য গ্রহণযোগ্য কোনো মাধ্যমে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও আলোচ্য পোস্টগুলোতে কোথাও এই দাবির স্বপক্ষে কোনো সূত্র কিংবা প্রমাণও উল্লেখ করা হয়নি।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে বাস্তব দৃশ্যের বলে এআই প্রযুক্তিতে তৈরি ছবি যুক্ত করে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর।




