সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের কান্নার একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, সুইডিশ মানবাধিকারকর্মী গ্রেটা থানবার্গকে হত্যার হুমকি দেওয়ার কাঁদলেন উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডন্ট কিম জং উন। এরকম দুটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে ও এখানে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর 'IBN News' নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি শেয়ার করে বলা হয়, "গ্রেটা থানবার্গকে ই'সরাইলি ড্রোনে হ'ত্যার হু'মকি: কাঁদলেন শক্ত মানব কিম জং উন। পিয়ংইয়ং, উত্তর কোরিয়া ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫: উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন সুইডিশ পরিবেশ আন্দোলনকারী গ্রেটা থানবার্গকে ইসরাইলি ড্রোনে হ'ত্যার “ভয়” দেখানোর খবর শুনে কেঁদে ফেলেন যা মুহূর্তেই সোশ্যাল মিডিয়া ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। গ্রেটা থানবার্গ, যিনি সম্প্রতি ইসরাইলের বিরুদ্ধে তাঁর সমালোচনার জন্য আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন, গাজার উপর ইসরাইলের নৌবাহিনী অবরোধ ভঙ্গের চেষ্টা করার সময় ইসরাইলি ড্রোনের আক্রমণের মুখোমুখি হন। এই ঘটনার পর থেকে তাঁর নিরাপত্তা বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে উত্তর কোরিয়া ইসরাইলের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করে গ্রেটা থানবার্গের নিরাপত্তার জন্য তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং গ্রেটা থানবার্গের কিছু হলে পা'রমাণবিক বো'মা ফেলার হু'মকি দিয়েছেন তেলআবিবে।" ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। মুলত, ২০২৩ সালে হওয়া একটি সংবাদ সম্মেলনে উত্তর কোরিয়ার নারীরা সন্তান গ্রহণ করছেন না- এমন তথ্য দিয়ে কেঁদেছিলেন দেশটির কিম জং উন। আলোচ্য ভিডিওটি সেই সময়ে ধারণ করা হয়।
আলোচ্য ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম কেটে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পরিচালিত গণমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্টের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর "Kim Jong Un tearfully begs North Korean women to have more kids as birth rate declines" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচ্য ভিডিওটির মত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যযা। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, "উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাধর নেতা কিম জং উন তার দেশের নারীদের ক্রমহ্রাসমান জন্মহার পূরণের জন্য আরও সন্তান জন্মদানের জন্য অশ্রুসিক্তভাবে অনুরোধ করেন। অন্যান্য পোশাকধারী নেতাদের পাশে দাঁড়িয়ে কিম বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি দেশকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে, যখন শ্রোতারা আবেগগত সংহতি প্রকাশ করে কাঁদছিলেন। “জন্মহার হ্রাস বন্ধ করা এবং ভালো শিশু যত্ন ও শিক্ষা প্রদান করা আমাদের পারিবারিক বিষয় যা আমাদের মায়েদের সাথে একসাথে সমাধান করা উচিত,” কিম তার বক্তৃতায় বলেন। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি পরিসংখ্যান সংস্থার মতে, ২০২২ সালে উত্তর কোরিয়ার একজন নারীর গড় ১.৭৯ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, যা ২০১৪ সালে ছিল ১.৮৮। যদিও এই সংখ্যা প্রতিদ্বন্দ্বী দক্ষিণ কোরিয়ার তুলনায় অনেক বেশি, যেখানে ২০২২ সালে প্রজনন হার ০.৭৮-এ নেমে এসেছে, কিম সাদা রুমাল দিয়ে তার চোখের দিকে তাকানোর সময় জোর দিয়েছিলেন যে উত্তর কোরিয়ার নারীদের তাদের জন্মহার বাড়াতে হবে। (অনূদিত)"। স্ক্রিনশট দেখুন--
আরো সার্চ করে অনলাইন পোর্টাল জাগোনিউজের ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর করা একটি পোস্টে আলোচ্য ভিডিওটির মত দৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, "নারীরা সন্তান নিচ্ছেন না, কাঁদলেন কিম জং উন"। । ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
এছাড়াও যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম স্কাই নিউজ, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট এবং দৈনিক পত্রিকা সমকালের অনলাইন ভার্সনে প্রচারিত সংবাদ থেকেও আলোচ্য ভিডিওটি সম্পর্কে একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ কিম জং উনের কান্নার এই ভিডিওটির সাথে গ্রেটা থুনবার্গের গ্রেফতারের কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি কারণে কেঁদেছিলেন কিম এবং ঘটনাটিও দুই বছরের আগের।
সুতরাং ভিন্ন ঘটনায় কিম জং উনের কান্নার ভিডিওকে বিভ্রান্তিকর দাবিসহ প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।