সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, ভিডিওটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলন চলাকালে ধারণ করা হয়েছে। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১ সেপ্টেম্বর 'Md Jamal Miya' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে ভিডিওটি শেয়ার করে বলা হয়, "এই মুহূর্তে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়! গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দেশ,,,"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য ভিডিওটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধারণ করা হয়নি। গত আগস্ট মাসে ইন্দোনেশিয়ায় পুলিশের গাড়ির নিচে চাপা পড়ে আফফান কুর্নিয়াওয়ান নামে একজন অনলাইন পণ্য ডেলিভারিম্যান নিহত হন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশটির রাজধানী জাকার্তায় বিক্ষোভ মিছিল ও আন্দোলন চলাকালে আলোচ্য ভিডিওটি ধারণ করা হয়।
আলোচ্য ভিডিওটির ব্যাপারে জানতে ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম কেটে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে 'lensa.sumbars' নামে একটি ইন্সটাগ্রাম একাউন্ট থেকে গত ২৯ আগস্ট পোস্ট করা আলোচ্য ভিডিওটির মত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, "ব্রিমোব সদর দপ্তরে বিক্ষোভ উত্তপ্ত, ভিড় সন্ধ্যা পর্যন্ত উত্তাল। ব্রিমোব সদর দপ্তরে পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত এবং উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠছে। আজ রাত পর্যন্ত, ক্ষুব্ধ জনতার ঢেউ থামেনি। বিভিন্ন পটভূমির হাজার হাজার বাসিন্দারা সেখানে পৌঁছাতে থাকে, যার ফলে পরিস্থিতি ক্রমশ জনাকীর্ণ এবং নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ন্যায়বিচারের দাবিতে ক্রমাগত চিৎকার শুরু হয়, যা একটি উত্তেজনাপূর্ণ এবং উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করে।বিকেল থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এখন ক্ষোভের এক উন্মত্ত ঢেউয়ে পরিণত হয়েছে। জনতার আবেগের আগুন জ্বলতে থাকে, যার ফলে আজ রাতের পরিবেশ উত্তপ্ত এবং তীব্র হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, অন্যদিকে জনতা ক্রমশ সাহসী হয়ে উঠছে এবং ব্রিমোব সদর দপ্তরের নিরাপত্তা ব্যারিকেডের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। (গুগলের সাহায্যে অনূদিত)"। ইন্সটাগ্রাম পোস্টটি দেখুন--
আরো সার্চ করে ইন্দোনেশিয়া থেকে পরিচালিত 'GalihAkbar-25' নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলেও আলোচ্য ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা হয়, "ভোর পর্যন্ত বিক্ষোভ শেষ হয়নি, বিক্ষোভকারীদের মনোবল বজায় রাখুন। (গুগলের সাহায্যে অনূদিত)"। স্ক্রিনশট দেখুন--
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ইন্দোনেশিয়া থেকে পরিচালিত গণমাধ্যম আন্তারায় গত ২৯ আগস্ট "Demo di Brimob Kwitang berlanjut hingga malam, situasi bentrok" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, "মধ্য জাকার্তার কুইতাং-এ মোবাইল ব্রিগেড কর্পস (মাকো ব্রিমোব) সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ সন্ধ্যা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল, ব্রিমোব অফিসাররা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করার চেষ্টা করলেও জনতা অটল ছিল। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭:০০ টা পর্যন্ত, কিছু বিক্ষোভকারী এখনও মাকো ব্রিমোবের সামনে তাদের অবস্থান ধরে রাখতে দেখা যাচ্ছিল। হালকা বৃষ্টিপাত সত্ত্বেও, বিক্ষোভ থামেনি এবং বিক্ষোভকারী এবং ব্রিমোব অফিসারদের মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহত ছিল। জনতা এবং ব্রিমোব অফিসারদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হলে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়, অফিসাররা কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে, অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরা আতশবাজি ও পাথর ছুঁড়ে পাল্টা আক্রমণ করে। এই পরিস্থিতি মাকো ব্রিমোবের চারপাশের পরিবেশকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে, রাস্তাগুলি কাঁদানে গ্যাসের মেঘে ভরে যায় এবং বিক্ষোভকারীরা ব্রিমোব অফিসারদের উপর আক্রমণ করার সাথে সাথে আতশবাজি বিস্ফোরিত হয়। (গুগলের সাহায্যে অনূদিত)"। ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, "বৃহস্পতিবার (২৮/৮) সন্ধ্যায় ব্রিমোবের একটি গাড়ির ধাক্কায় নিহত তাদের সহকর্মী আফান কুর্নিয়াওয়ানের মৃত্যুর প্রতিবাদে শুক্রবার সকালে অনলাইন মোটরসাইকেল ট্যাক্সি চালকদের একটি ভিড় ওই এলাকার ব্রিমোব সদর দপ্তরে এসেছিল।"। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, ইন্দোনেশিয়া থেকে পরিচালিত সংবাদমাধ্যম রিপাবলিক, দিতিক নিউজ এবং সিএনবিসি ইন্দোনেশিয়ার ওয়েবসাইটে প্রচারিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকেও জানা যায় একই তথ্য। মূলত, ইন্দোনেশিয়ায় পুলিশের গাড়ির নিচে চাপা পড়ে আফফান কুর্নিয়াওয়ান নামে একজন ডেলিভারিম্যানের মৃত্যুর পর সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ওই বিক্ষোভ চলাকালে আলোচ্য ভিডিওটি ধারণ করা হয়।
পরবর্তীতে আলোচ্য ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ভিডিওটিতে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তিকে ইন্দোনেশিয়ার পতাকা বহন করতে দেখা যায়। স্ক্রিনশট দেখুন--
ইন্দোনেশিয়ার পতাকার একটি ছবি দেখুন--
অর্থাৎ আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য ভিডিওটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা বাংলাদেশে ধারণ করা হয়নি। ইন্দোনেশিয়ায় বিক্ষোভ চলাকালে আলোচ্য ভিডিওটি ধারণ করা হয়।
সুতরাং ইন্দোনেশিয়ার বিক্ষোভের ভিডিও শেয়ার করে ভিডিওটিতে বাংলাদেশের বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে যা বিভ্রান্তিকর।