সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, ও পেজ থেকে গতবছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার একটি ছবি দিয়ে দাবি করা হচ্ছে, তিনি আবারও বিশ্বে ১৭৩ জন প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সৎ ও দুর্নীতি মুক্ত প্রধানমন্ত্রী তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২৭ জুলাই 'Tulip Rizwana Siddiq' নামের একটি আইডি থেকে পোস্ট করে উল্লেখ্য করা হয়, “আলহামদুলিল্লাহ আবার ও বিশ্বে ১৭৩ জন প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সৎ ও দুর্নীতি মুক্ত প্রধানমন্ত্রী তালিকায় ৩য়..মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।" নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি ভিত্তিহীন। প্রকৃতপক্ষে কোনো ধরণের তথ্যসূত্র ছাড়াই বিশ্বের সবচেয়ে সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত সরকার প্রধানের তালিকায় বাংলাদেশের পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় স্থানে আছেন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা নেতৃত্বধীন সরকার ও তার পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের বিরুদ্ধে অসংখ্য দুর্নীতির অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রথমত, ভাইরাল ফেসবুক পোস্টগুলোতে কোনো ধরণের তথ্য বা সূত্র উল্লেখ্য করা নেই।
পাশাপাশি, কি ওয়ার্ড সার্চ করে আলোচ্য দাবির প্রেক্ষিতে কোনো ধরণের নির্ভরযোগ্য তথ্য কিংবা প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
দ্বিতীয়ত, কি ওয়ার্ড সার্চ করে “Bangladesh’s Prime Minister Sheikh Hasina World’s 3rd Honest Politician” শিরোনামে ‘usanewsonline’ নামক একটি অখ্যাত পোর্টালে ২৭ জুলাই প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে তথ্যসূত্র হিসেবে উল্লেখ্য করা হয়, ‘পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান পাঁচজন বিশ্বনেতাকে চিহ্নিত করেছে, যারা কোনো ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত হননি, বিদেশে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই এবং যাদের উল্লেখযোগ্য কোনো সম্পদ নেই। বিশ্বের শীর্ষ পাঁচজন সবচেয়ে সৎ নেতার তালিকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তৃতীয় অবস্থানে রাখা হয়েছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
প্রতিবেদনটিতে প্রকাশিত তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে ‘পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স’ নামক প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে কি ওয়ার্ড সার্চ করে এই নামের কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই নামে কিছু বই ও সিরিজের নাম পাওয়া যায়। স্ক্রিনশট দেখুন--
এদিকে, কি ওয়ার্ড সার্চ করে “শেখ হাসিনার আমলে দুর্নীতি ও দুদকের তৎপরতা” শিরোনামে জার্মানভিত্তিক বাংলা সংবাদ মাধ্যম ‘ডয়েচ ভেল’ এর অনলাইনে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। গত ২০২৫ সালের ১৩ জুন প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, “এই সময়ে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মোট ছয়টি মামলায় চার্জশিট দিয়েছে দুদক৷ শেখ হাসিনা পরিবারের বাইরে আরো তিনটি বড় মামলায় চার্জশিট হয়েছে বলে জানা গেছে৷ ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচলে নতুন শহর প্রকল্পে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দের মামলায় শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে ছয়টি চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে ১১ মার্চ৷ এই চার্জশিটে শেখ হাসিনা ছাড়াও পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আছেন শেখ রেহানা, সজীব ওয়ারজদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল৷ সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন এবং জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৪ কর্মকর্তার নাম রয়েছে৷ গত ১২, ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুদকে পৃথক ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল।” স্ক্রিনশট দেখুন--
পাশাপাশি, কি ওয়ার্ড সার্চ করে “২১ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ, শেখ হাসিনার ৮ প্রকল্পের তথ্য চায় দুদক” শিরোনামে ‘ডেইলি স্টার’ অনলাইনে আরো একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ৮ প্রকল্পের ২১ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, কি ওয়ার্ড সার্চ করে বাংলাদেশ সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ দেশের তালিকায় ১৪তম অবস্থান নিয়েও একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। গত ২০২৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের করাপশন পারসেপশন ইনডেক্স (সিপিআই) অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ১৪তম অবস্থানে রয়েছে। ২০২৩ সালে এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০ম।
অর্থাৎ শেখ হাসিনা বিশ্বের সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত সরকার প্রধানদের তালিকায় তৃতীয় দাবিটি ভিত্তিহীন।
সুতরাং শেখ হাসিনা বিশ্বের সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত সরকার প্রধানদের তালিকায় তৃতীয় দাবিতে ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।