সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, নেত্রকোনার আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টুকে কারাগারে হত্যা করা হয়েছে। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
৭ ঘন্টা আগে 'Nusrat Jahan Anonna' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে পোস্ট করে বলা হয়, "নেত্রকোনার এমপি ইফখারুল উদ্দিন পিন্টু কে কারাগারে হ/ত্যা করা হয়েছে। প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে তিনি অসুস্থ অবস্থায় মৃ'ত্যুবরণ করেছেন,কিন্তু উনার শরীরের দিকে তাকালেই বুঝা যায় শারীরিক নি'র্যাতন করে উনাকে হ/ত্যা করা হয়েছে। সংসদ সদস্য হ'ত্যার বিচার চাই"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু কারাগারে মারা যাননি বরং ঢাকার নিজ বাড়িতে অসুস্থতাজনিত কারণে ইফতিকার উদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে বলে তার ভাগ্নে জাকির হোসেন প্রবাল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। গতবছর ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।
আলোচ্য দাবিটির সত্যতা জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক পত্রিকা যুগান্তরের অনলাইন ভার্সনে গত ২৮ জুলাই "নেত্রকোনা-৩ আসনের সাবেক এমপি পিন্টু আর নেই" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, "নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনের দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থতায় ভোগার পর সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুরে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টুর ভাগ্নে জাকির হোসেন প্রবাল এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, সাবেক এমপি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতায় ভুগছিলেন। এ অবস্থায় সোমবার তিনি ঢাকার নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেন। মরহুমের প্রথম জানাজা মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বেলা ১১টায় জেলার আটপাড়া উপজেলার তেলিগাতী সরকারি কলেজ মাঠে, দ্বিতীয় জানাজা দুপুর সোয়া ২টায় কেন্দুয়া জয়হরি স্প্রাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠে এবং তৃতীয় জানাজা একই দিন বাদ আসর মরহুমের গ্রামের বাড়ি কেন্দুয়া উপজেলার কচন্দরা গ্রামে অনুষ্ঠিত হবে। পরে তাকে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।"। স্ক্রিনশট দেখুন--
আরো সার্চ করে দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সনে গত ৩১জুলাই "নেত্রকোনার সাবেক সংসদ সদস্য ইফতিকার উদ্দিন মারা গেছেন" প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও জানা যায় একই তথ্য। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম সময় টিভি ও এনটিভির অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও জানা যায় একই তথ্য।
পরবর্তীতে, আরো কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক পত্রিকা কালবেলার অনলাইন ভার্সনে "সাবেক এমপি পিন্টুর মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে : কারা অধিদপ্তর" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, "নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনের ২ বারের সংসদ সদস্য (এমপি) ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টুর মৃত্যু নিয়ে ‘গুজব’ ছড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কারা অধিদপ্তরের এআইজি ফরহাদ। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, নেত্রকোন-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টুর কারাগারে মৃত্যু সংক্রান্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের খবরটি সঠিক নয়। তিনি কারাগারে আটক ছিলেন না। বিষয়টি একটি গুজব। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন এবং সতর্ক থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন কারা অধিদপ্তরের এআইজি ফরহাদ। এর আগে সোমবার (২৮ জুলাই) পিন্টুর মৃত্যুর তথ্য জানা যায়। স্বজনদেরে বরাতে বিভিন্ন গণমাধ্যম জানায় নিকুঞ্জের এক বাসায় তিনি মারা যান।" স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু কারাগারে মারা যাননি। তিনি অসুস্থতাজনিত কারণে ঢাকার নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে তার ভাগ্নে জাকির হোসেন গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
সুতরাং আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু কারাগারে মারা গেছেন বলে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।