সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, কুমিল্লার মুরাদনগরের সেই হিন্দু নারী আত্মহত্যা করেছেন। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৯ জুন ‘Soikat Dey’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দাবিটি পোস্ট করা হয়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, “মুরাদনগরের ধর্ষিতা মেয়েটি আত্ম*হত্যা করেছে ! আমাদের ক্ষমা করে দিস বোন ...সোর্স লিং কমেন্টে.. "। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। কুমিল্লার মুরাদনগরের সেই হিন্দু নারী আত্মহত্যা করেননি বরং কোনো সূত্র ছাড়াই তথ্যটি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
‘Soikat Dey’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে তথ্যটির সোর্স কমেন্টে দেওয়া হয়েছে। কমেন্টে একটি ফেসবুক পোস্টের লিংক পাওয়া যায়। এতে একই তথ্য উল্লেখ করে সন্দেহ পোষণ করা হয়েছে। অর্থাৎ তথ্যটি নিশ্চিতভাবে প্রচার করা হয়নি বরং সত্য নাকি মিথ্যা তা জানতেও চাওয়া হয়েছে।
তবে পোস্টটির এডিট হিস্টোরি থেকে দেখা যায় এটি বেশ কয়েকবার এডিট করা হয়েছে। প্রথমে 'মুরাদনগরের ধর্ষিতা মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে আমাদের ক্ষমা করে দিস বোন 🥲🙏' লিখে পোস্ট করা হলেও কয়েকবার এডিট করে পরবর্তীতে তথ্যটির সত্যতা জানতে চেয়ে পোস্টটি হালনাগাদ করা হয়েছে। পোস্টটির স্ক্রিনশট (বামে) এবং এডিট হিস্টোরির (ডানে) কোলাজ দেখুন--
অর্থাৎ আলোচ্য ফেসবুক পোস্টটির সোর্স পোস্টটিও সন্দেহ পোষণ করে এডিট করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে সার্চ করে স্থানীয় কিংবা জাতীয় গণমাধ্যমে এ জাতীয় কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে সার্চ করে আলোচ্য দাবিটি সহ প্রথমদিকের একটি পোস্ট পাওয়া যায় সকাল ১১:৪৮ মিনিটে। দেখুন--
সার্চ করে দৈনিক নয়া দিগন্তের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ভুক্তভোগী নারীর একটি সাক্ষাতকার প্রচার করা হয় বিকেল ৪টা ২৪ মিনিটে; দাবিটি প্রথমদিকে প্রচারিত হওয়ার প্রায় ৪ ঘন্টা পরে।
এছাড়াও কুমিল্লার এখন টিভির প্রতিনিধি ও ব্যুরো চিফ সাইফুল্লাহ খালিদ তার ফেসবুকেও দাবিটিকে গুজব বলে নিশ্চিত করেছেন।
অর্থাৎ কুমিল্লার মুরাদনগরের ভুক্তভোগী হিন্দু নারীর আত্মহত্যার তথ্যটি সত্য নয়।
উল্লেখ্য গত ২৬ জুন (বৃহস্পতিবার) রাত আনুমানিক ১০টার দিকে কুমিল্লার মুরাদনগরের হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক নারীকে ফজর আলী (৩৮) নামের এক ব্যক্তি ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী নারী। এই ঘটনায় ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেন আরো কয়েকজন।
এই ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মূল অভিযুক্ত ফজর আলীকে আজ ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও ওই নারীকে নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে মো. সুমন, রমজান আলী, মো. আরিফ ও মো. অনিককেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে কুমিল্লার মুরাদনগরের ভুক্তভোগী হিন্দু নারীর আত্মহত্যার ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।