সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি শেয়ার করে বলা হচ্ছে, নোয়াখালীতে অস্ত্রসহ দুই শিবির কর্মী আটক হয়েছেন। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৪ অক্টোবর 'Md Gupor' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে দুটি ছবির একটি কোলাজ শেয়ার করে বলা হয়, "নোয়াখালীতে পুলিশের অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ দুই শিবির কর্মী আটক এ অস্ত্র গুলা দিয়ে গুলি করে আপনাকে বেহেস্তে পাঠিয়ে দিবেন"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য ছবিটি ২০২১ সালে ‘জিহাদী বই ও লিফলেট’ সহ দুই শিবির কর্মী আটকের। তবে আটক হওয়ার সময়ে তাদের কাছে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়াও আলোচ্য পোস্টে যুক্ত আগ্নেয়াস্ত্রের ছবিটি ভিন্ন একটি সংবাদ প্রতিবেদনের সাথে সম্পৃক্ত। অর্থাৎ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের ভিন্ন সংবাদের ছবির সাথে শিবির কর্মী আটকের ছবি যুক্ত করে আলোচ্য ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
আলোচ্য ছবিটির সম্পর্কে জানতে ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম একুশে টেলিভিশনের অনলাইন ভার্সনে ২০২১ সালের ১৬ অক্টোবর "জিহাদী বই লিফলেটসহ ২ শিবির নেতা আটক" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচ্য ছবিটির মত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, "মৌলভীবাজার শহরের পূর্ব সুলতানপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল সংখ্যক জিহাদী বই, লিফলেটসহ দুই শিবির নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) হাসান মোঃ নাসের রিকাবদার। আটককৃতরা মৌলভীবাজার টাউন সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাব্বির ইসলাম তানভির ও সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন মোঃ বখতিয়ার। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) হাসান মোঃ নাসের রিকাবদার বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রদ্রোহী ও ধ্বংসাত্মক এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য গোপনে শলাপরামর্শ করছিলো। যে কোন সময় তারা ধ্বংসাত্মক এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাত। তাদের কাছ থেকে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের জিহাদী বই, লিফলেট, চাঁদা আদায়ের রশিদ, মোবাইল ফোনসহ ২৬ ধরণের শতাধিক বই উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।"। তবে, প্রতিবেদনের কোথাও তাঁদের সাথে আগ্নেয়াস্ত্র থাকার ব্যাপারে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, যমুনা টেলিভিশন, নিউজ বাংলা ২৪ এবং ডিবিসি নিউজের ওয়েবসাইটে প্রচারিত প্রতিবেদন থেকেও আলোচ্য ছবিটি সম্পর্কে একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
আরো সার্চ করে গত ২৪ অক্টোবর নোয়াখালী জেলা পুলিশের পরিচালিত ফেসবুক পেজে করা একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে বলা হয়, "সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভুয়া পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে — 👉 “নোয়াখালীতে পুলিশের অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ দুইজনকে আটক করা হয়েছে।” 🚫 এ তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন। নোয়াখালী জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো অভিযান বা গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেনি।" ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
এছাড়াও, আলোচ্য ফেসবুক পোস্টে সংযুক্ত করা আগ্নেয়াস্ত্রের ছবিটির ব্যাপারে জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ইংলিশের ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর "Nasir Ahmed: The last of the gun sellers" শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে আলোচ্য ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে নাসির আহমেদ নামে একজন অস্ত্র ব্যবসায়ীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বর্তমান অবস্থা নিয়ে লেখা হয়। নুরে আলম নামে একজন চিত্রগ্রাহকের ধারণকৃত নাসির আহমেদের ওই প্রতিষ্ঠানে থাকা অস্ত্রসম্ভারের একাধিক আলোকচিত্রের মধ্যে আলোচ্য ছবিটিও খুঁজে পাওয়া যায়। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। শিবির কর্মীদের আটক হওয়ার ছবিটি পুরোনো এবং তাঁরা আগ্নেয়াস্ত্রসহ আটক হননি। শিবির কর্মী আটক ও অস্ত্র উদ্ধারের দুটি পুরোনো ছবিকে যুক্ত করে বিভ্রান্তিকর দাবি সহ প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং এডিটেড ছবি দিয়ে অস্ত্রসহ শিবির কর্মীদের আটক হওয়ার বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে।




