সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের ক্রিকেটার তাওহীদ হৃদয়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের সময়ে ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর 'RJ Sports News' নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি শেয়ার করে বলা হয়, "এবার রিদয়ে বাড়িতে আ*গুন দিলো ক্রিকেট ভক্তরা ! সব পুড়ে ছাই, অবাক রিদয় খবর শুনে রীতিমতো কাঁদছেন। #asiacup2025"। স্ক্রিনশট দেখুন (স্ক্রিনশটটি ২৮ সেপ্টেম্বর নেয়া)--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য ভিডিওটির সাথে তাওহীদ হৃদয়ের কোনোপ্রকারের সম্পর্ক নেই। গত ফেব্রুয়ারি মাসে হাতিয়ার সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগের সময়ে আলোচ্য ভিডিওটি ধারণ করা হয়।
আলোচ্য ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম কেটে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দৈনিক পত্রিকা দেশ রূপান্তরের অনলাইন ভার্সনে গত ৭ ফেব্রুয়ারি "সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর বাড়ি ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ" শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে আলোচ্য ভিডিওটির মত একটি দৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, "নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর দুটি বাস ভবনে ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে উত্তেজিত ছাত্র-জনতা। এ সময় তারা মোহাম্মদ আলীর ৭টি স্প্রিটবোট ও ৪টি ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকায়ও আগুন দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) শেষ রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে এ হামলা, ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানায়, বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ১১টার দিকে হাতিয়া উছখালি বাজারের দক্ষিণে মোহাম্মদ আলীর বাসার দিকে উত্তেজিত ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে যায়। এ সময় ভেতর থেকে ধাওয়া দিলে তারা পিছু হটে। এ সময় ভেতর থেকে ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে কয়েক হাজার ছাত্র-জনতা একত্রিত হয়। পরে তারা প্রথমে উছখালি বাজারের দক্ষিণের এমপির পুল এলাকাস্থ বাসায় এবং পরে উছখালি বাজারের উত্তরে ব্রিকফিল্ড এলাকাস্থ বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে এবং একপর্যায়ে দুই বাড়িতে আগুন দেয়। এতে দুটি দোতলা ভবন, একটি গোডাউন, একটি গাড়ির গ্যারেজ, জেনারেটর রুম ও কয়েকটি গোলঘর পুড়ে যায়। পরে ভোরের দিকে নলচিরা ঘাটে থাকা মোহাম্মদ আলীর ৭টি স্প্রিটবোট ও ৪টি ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকায় আগুন দেয়। হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আজমল হুদা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, তবে বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।" স্ক্রিনশট দেখুন--
আরো সার্চ করে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম ডিবিসি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে গত ৭ ফেব্রুয়ারি পোস্ট করা একটি শর্ট ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা থাকতে দেখা যায়, "সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর দুই বাড়ি ও ১১ নৌযানে আগুন | DBC NEWS"। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও হাতিয়া নিউ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ৭ ফেব্রুয়ারি "হাতিয়া-৬ এমপি মোহাম্মদ আলীর বাসা-ভবন পুড়ে ছাই | Hatiya news Noakhali | হাতিয়া নোয়াখালী | আজকের খবর" শিরোনামে একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির শুরুতেই আলোচ্য ভিডিওটির মত দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। ওই ভিডিও প্রতিবেদনে উপস্থাপককে বলতে শোনা যায়, "নোয়াখালীর হাতিয়ার সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর বাসভবন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে"। ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন--
এছাড়াও হাতিয়া টিভি | Hatiya TV নামে আরেকটি ইউটিউব চ্যানেল থেকেও জানা যায় একই তথ্য।
অর্থাৎ আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। হাতিয়ার সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে ২০২৪ সালে অগ্নিসংযোগের সময়ে আলোচ্য ভিডিওটি ধারণ করা হয়। ভিডিওটি তাওহীদ হৃদয়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের নয়। এদিকে, বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড ধরে সার্চ করে তাওহীদ হৃদয়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের কোনো তথ্য গ্রহণযোগ্য কোনো মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং হাতিয়ার সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে ২০২৪ সালে অগ্নিসংযোগের ভিডিওকে তাওহীদ হৃদয়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।