সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি মরদেহ বহনকারী এম্বুলেন্সের ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, এম্বুলেন্সটি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মরদেহ বহন করছে। এরকম দুটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে ও এখানে।
গত ৯ জুলাই 'Mahedi Hassan'নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে আলোচ্য ভিডিওটি শেয়ার করে বলা হয়, "লাস হয়ে ফিরলেন।" উক্ত ভিডিওটিতে নারী কন্ঠে একজন উপস্থাপককে বলতে শোনা যায়, "শেষবারের মত মাতৃভূমিতে ফিরলেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার মরদেহ আজ সকাল ৬ টায় বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মরদেহ পৌছালে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার প্রদান করাহয়। উপস্থিত ছিলেন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, পরিবারের সদস্য এবং হাজারো শোকাহত জনতা।" ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। ২০২৩ সালের ১৫ আগস্ট সাবেক জামায়াত নেতা ও সংসদ সদস্য দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পরে ঢাকা থেকে এম্বুলেন্সে করে তার নিজ জেলা পিরোজপুরে তার মরদেহ বহনকালে ঢাকায় তার জানাজার নামাজ পড়ানোর দাবিতে এম্বুলেন্স আটকে বিক্ষোভ করে জনতা। আলোচ্য ভিডিওটি ওই সময়ে ধারণ করা হয়।
আলোচ্য ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ভিডিওটিতে মোট দুটি কণ্ঠস্বর শুনতে পাওয়া যায়। দ্বিতীয় কণ্ঠস্বরে একজন পুরুষকে বলতে শোনা যায়, "এই গাড়িটিতেই রয়েছে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মরদেহ। গাড়িটির চাকা পাংকচার করে দেওয়া হয়েছে।" ফলে, ধারণা পাওয়া যায়, ভিডিওটি সাবেক জামায়াত নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মরদেহ বহন করে নিয়ে যাচ্ছিল।
পরবর্তীতে ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১৫ আগস্ট "ঢাকায় সাঈদীর জানাজার দাবিতে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স আটক |" শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির ২ মিনিট ১৩ সেকেন্ড থেকে আলোচ্য ভিডিওটিতে দেখানো এম্বুলেন্সের মত একটি এম্বুলেন্স দেখতে পাওয়া যায়। দুটি এম্বুলেন্সের গায়ে একই লেখা থাকতে দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও, ভিডিওটিতে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে বহন করা এম্বুলেন্সটি শাহবাগে নিয়ে যাওয়া হয় বলে উল্লেখ করতে শোনা যায় যা আলোচ্য ভিডিওটির সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন--
এবারে, আলোচ্য ভিডিওটি থেকে নেওয়া একটি স্ক্রিনশট (বামে) এবং বাংলাভিশনের সংবাদ প্রতিবেদন থেকে নেওয়া একটি স্ক্রিনশট দেখুন পাশাপাশি--
এছাড়াও, ওই একই দিনে দৈনিক পত্রিকা কালবেলা এবং বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম যমুনা টেলিভিশনে প্রচারিত সংবাদ থেকেও মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মরদেহ বহনকারী এম্বুলেন্স আটক করে বিক্ষোভের সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট কারাগারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় সাবেক এই জামায়াত নেতা ও সংসদ সদস্যের।
অর্থাৎ আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য ভিডিওতে দেখানো এম্বুলেন্সে শেখ হাসিনার নয় বরং মাওলানা সাঈদীর মরদেহ বহন করা হচ্ছিল। এছাড়াও, বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড ধরে সার্চ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুর সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং মাওলানা সাঈদীর মরদেহ বহনকারী এম্বুলেন্সের ভিডিও শেয়ার করে এম্বুলেন্সে শেখ হাসিনার মরদেহ বহন করা হচ্ছে বলে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে।