সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি ও পেজ থেকে একজন বৃদ্ধের ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের সমর্থক হওয়ায় ইদ্রিস শেখ’কে কারাগারে যেতে হয়েছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ৩০ জুলা্ই ‘Newton Molla’ নামক একটি আইডি থেকে তিনটি ছবি পোস্ট করে উল্লেখ করা হয়, “১২০ বছর বয়সী ,ইদ্রিস শেখের আদালতে হাজিরা ও প্রিজন ভ্যানে যাত্রা, অপরাধ আওয়ামীলীগ সমর্থক! মনে রেখো দালাল, শুসীল, চাটুকার, জ্ঞান পাপীর দল।” নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে ১২০ বছর বয়সী ইদ্রিস শেখ নামের বৃদ্ধকে আওয়ামী লীগের সমর্থক হওয়ার জন্য পুলিশ গ্রেফতার করেনি বরং ২০০৩ সালের এক হত্যা মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আলোচ্য পোস্টের ছবি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে “আসামি শতবর্ষী ইদ্রিস শেখের আদালতে হাজিরা ও প্রিজন ভ্যানে যাত্রা’ শিরোনামে ‘প্রথম আলো’র অনলাইনে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। চলতি বছরের ৩০ জুলাই প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্রচারিত ছবির সঙ্গে আলোচ্য ছবিগুলোর মিল পাওয়া যায়। যেখানে ওই বৃদ্ধের পরিচয় সম্পর্কে বলা হয়, তার নাম ইদ্রিস শেখ এবং তার বয়স ১২০ বছর। স্ক্রিনশট দেখুন--
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইদ্রিস শেখদের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর থানার শেখেরটেক এলাকায়। ২২ বছর আগে অর্থাৎ ২০০৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি শেখেরটেক এলাকায় শামসুল হক হাওলাদার ও সিরাজুল হক মোল্লার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। চাঞ্চল্যকার এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালের ১০ নভেম্বর মাদারীপুরের আদালত অভিযোগ গঠন করেন। ২০১০ সালে মামলাটি চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গেজেট হওয়ার পর ২০১০ সালে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল-১ আদালতে বদলি হয়। প্রায় পাঁচ বছর সাক্ষ্য গ্রহণ ও যুক্তি–তর্ক শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর রায় দেন বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিন। রায়ে এ মামলায় চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় একজনকে। আর ইদ্রিস শেখসহ নয়জনকে দেওয়া হয় ১০ বছর করে কারাদণ্ড। ইদ্রিস শেখের বিরুদ্ধে গুরুতর জখম করার অভিযোগ আনা হয়। রায়ের বিবরণ অনুযায়ী, রায়ের দিন ইদ্রিস শেখ আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিদেনে ইদ্রিস শেখের আইনজীবী রফিকুল ইসলামের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ইদ্রিস শেখ একজন অতিশয় বৃদ্ধ মানুষ। রাজৈর থানার এই খুনের মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া রায় বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট বিভাগ। হাইকোর্ট বিভাগের রায় চ্যালেঞ্জ করতে চান ইদ্রিস শেখ। কিন্তু সে জন্য ইদ্রিস শেখসহ সাতজন আসামি আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। কারাগারে থেকেই জেল আপিল করবেন বৃদ্ধ ইদ্রিস শেখ।
আলোচ্য প্রতিবেদনে ইদ্রিস শেখকে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতার জন্য কারাগারে দেওয়া হয়েছে এমন কোনো তথ্য উল্লেখ্য নেই।
পাশাপাশি, কি ওয়ার্ড সার্চ করে “১২০ বছর বয়সী সেই বৃদ্ধ কারাগারে কেন, যা জানা গেল” শিরোনামে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘বাংলানিউজ২৪’ এর অনলাইনে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ৩১ জুলাই প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৩ সালের একটি খুনের মামলায় আসামী হওয়া ইদ্রিস শেখ’কে ২০১৫ সালে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ইদ্রিস শেখের বিরুদ্ধে গুরুতর জখম করার অভিযোগ আনা হয়। রায়ের বিবরণ অনুযায়ী, রায়ের দিন ইদ্রিস শেখ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আলোচ্য প্রতিবেদনটিতেও কোথাও আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ্য পাওয়া যায়নি। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ ১২০ বছর বয়সী ইদ্রিস শেখকে আওয়ামী লীগের সমর্থক হওয়ার জন্য পুলিশ গ্রেফতার করেনি বরং ২০০৩ সালের এক হত্যা মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। দলটির প্রধান ও ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যায়। বর্তমানে বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত দলটির নেতারা বিভিন্ন মামলায় কারাগারে আটক আছেন। অনেকেই পালিয়ে আছেন। যার সঙ্গে আলোচিত ১২০ বছর বয়সী ইদ্রিস শেখ’ এর কারাগারে যাওয়ার সম্পর্ক নেই।
সুতরাং ২০০৩ সালের হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ইদ্রিস শেখ আওয়ামী লীগ সমর্থন করায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।