বরিশালে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় উদ্ধার হওয়া নারী হিন্দু নন
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, বরিশাল-ভোলা মহাসড়কের পাশে পলিথিনে পেঁচানো অবস্থায় উদ্ধার মারিয়া বেগম মুসলিম বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি শেয়ার করে বলা হচ্ছে, বরিশালে একজন হিন্দু নারীকে হাত-পা বেঁধে এবং পলিথিনে পেঁচিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৯ জুন 'হিন্দু মহাজোট ৬৪ জেলা' নাম একটি ফেসবুক পেজ থেকে ছবিটি শেয়ার করে বলা হয়, "আরেকটি ঘটনাঃ- 🔴 বরিশালে বিবাহিত হিন্দু নারীকে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় উদ্ধার! আজ খুব ভোরে বরিশাল-ভোলা সড়কের তালুকদার মার্কেট এলাকার একটি জঙ্গল থেকে এক বিবাহিত হিন্দু নারীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। নারীটির হাত-পা শক্তভাবে বাঁধা ছিল এবং পুরো শরীর পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় ছিল। ভুক্তভোগীর বাড়ি বরিশালের রুপাতলী গ্যাস্টারবাইন এলাকায়। জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যায় তিনি ভোলার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন, কিন্তু এরপর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে এই মহিলাটিও ধর্ষণের শিকার।। ❗এই ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই! আমরা অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। 📍 ঘটনার স্থান: তালুকদার মার্কেট এলাকা, বরিশাল-ভোলা সড়ক 📅 তারিখ: ২৯ জুন ২০২৫ #SaveBangladeshiHindus"। স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য ছবিটিতে দেখানো নারী হিন্দু নন। বরিশাল-ভোলা মহাসড়কের পাশ থেকে পলিথিনে পেঁচানো অবস্থায় উদ্ধার হওয়া ওই নারীর নাম মারিয়া বেগম। তিনি বরিশালের বাসিন্দা এবং তার স্বামীর নাম মশিউর রহমান। মারিয়া বেগম মুসলিম বলে বরিশাল বন্দর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) দেলোয়ার হোসেন বুম বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছেন।
আলোচ্য ছবিটির ব্যাপারে জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক পত্রিকা সমকালের ওয়েবসাইটে গত ২৯ জুন 'বরিশালে পলিথিনে পেঁচানো হাত-পা বাঁধা নারী উদ্ধার' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচ্য ছবিটির মত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, "বরিশাল সদরের তালুকদারের হাট এলাকায় হাত-পা বাঁধা ও পলিথিনে পেঁচানো অবস্থায় মারিয়া বেগমকে (২৩) উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে স্বামীর প্রাক্তন স্ত্রীর স্বজনরা নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। রোববার ভোরে বরিশাল-ভোলা সড়কের পাশ থেকে স্থানীয়রা মারিয়াকে উদ্ধার করেন। পরে পুলিশ শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করে। বন্দর থানার এসআই সিরাজুল ইসলাম জানান, মারিয়ার স্বামীর নাম মশিউর রহমান। শ্বশুর বাড়ি ভোলায়। বরিশাল নগরীর দপদপিয়া গ্যাসটারবাইন এলাকায় তার বাবার বাড়িতে থাকেন।"। স্ক্রিনশট দেখুন--
আরো সার্চ করে দৈনিক পত্রিকা ইত্তেফাকের ওয়েবসাইটে গত ২৯ জুন 'মহাসড়কের পাশ থেকে পলিথিনে মোড়ানো এসিডদগ্ধ অন্তঃসত্ত্বা নারী উদ্ধার' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও আলোচ্য ছবিটির মত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, "বরিশাল-ভোলা মহাসড়কের পাশ থেকে হাত-পা বাধা ও পলিথিনে পেঁচানো অবস্থায় এসিডদগ্ধ তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা মাঝবয়সী এক নারীকে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার (২৯ জুন) ভোরে মেট্রোপলিটন এলাকার বন্দর থানাধীন তালুকদারহাট এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বন্দর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) দেলোয়ার হোসেন। পুলিশ পরিদর্শক দেলোয়ার বলেন, ওই নারীকে শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) নেওয়া হয়েছে। তার চিকিৎসা চলছে। অন্তঃসত্ত্বা ওই নারী অজ্ঞান অবস্থায় আছেন। তাই বিস্তারিত পরে জানানো হবে।"। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, দৈনিক পত্রিকা আজকের পত্রিকার অনলাইন ভার্সন এবং টেলিভিশন চ্যানেল এখন টিভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত খবর থেকেও জানা যায় একই তথ্য।
পরবর্তীতে ভুক্তভোগী নারী মারিয়া বেগম হিন্দু কি না জানতে বরিশাল বন্দর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) দেলোয়ার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করে বুম বাংলাদেশ। এসময়ে, মারিয়া বেগম মুসলিম ধর্মাবলম্বী বলে বুম বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেন দেলোয়ার হোসেন।
অর্থাৎ আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় উদ্ধার হওয়া নারীর নাম মারিয়া বেগম। তিনি হিন্দুধর্মের নন বরং ইসলাম ধর্মের অনুসারী।
সুতরাং বরিশালে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় উদ্ধার মুসলিম নারীকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।