একসাথে নামাজ ও রামলীলা অনুষ্ঠানের এই ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ভারতের উত্তরপ্রদেশের বেনারসে ধর্মীয় সম্প্রীতির স্মারক হিসেবে রামলীলা ও নামাজ একসাথে অনুষ্ঠিত হয়।

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে পাশাপাশি অবস্থান নিয়ে কিছু ব্যক্তিকে নামাজরত এবং কিছু ব্যক্তিকে হিন্দু ধর্মীয় রামলীলা উপাসনারত থাকার একটি ভিডিও শেয়ার করে ভিডিওটি বাংলাদেশের এবং নামাজরত ব্যক্তিরা জামায়াতের অনুসারী বলে দাবি করা হচ্ছে। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
কয়েক ঘন্টা আগে 'নবাবগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদল' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে ভিডিওটি শেয়ার করে বলা হয়, "জামায়াতে ইসলামী। আহারে নামাজ। আহারে ধর্ম। নিজেদের সুবিধামতো ফতোয়া জারি, আর ধর্ম ব্যবহার আর কত?"। ফেসবুক স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ভারতের উত্তরপ্রদেশের বেনারসে ধর্মীয় সম্প্রীতির স্মারক হিসেবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রামলীলা ও ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের নামাজ একসাথে অনুষ্ঠিত হয়। আলোচ্য ভিডিওটি সেরকমই একটি অনুষ্ঠান চলাকালে ধারণ করা হয়।
আলোচ্য ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম কেটে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে গত ২৭ সেপ্টেম্বর 'Junaid Raniya' নামে একটি একাউন্ট থেকে করা একটি পোস্টে আলোচ্য ভিডিওটির মত হুবহু একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ওই পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, "#यही_मेरा_भारत_है #सभ्य समाज के सभ्य लोगो की तस्वीर.... #काशी में लाट भैरव #मंदिर और #मस्जिद का विवाद बरसों से चला आ रहा है। मगर इस विवाद का कभी यहां की #रामलीला के #मंचन पर असर नहीं पड़ा। हमेशा यहां #नमाज के साथ-साथ रामलीला का मंचन होता आया है। (#এটা_আমার_ভারত। একটি সভ্য সমাজের সভ্য মানুষের ছবি... #কাশিতে লাট ভৈরব মন্দির এবং মসজিদ নিয়ে বিরোধ বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। তবে, এই বিরোধ এখানে #রামলীলা মঞ্চস্থ করার ক্ষেত্রে কখনও প্রভাব ফেলেনি। রামলীলা সর্বদা #প্রার্থনার পাশাপাশি পরিবেশিত হয়ে আসছে।)" ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
আরো সার্চ করে 'dalimss.news.banaras' নামে একটি ইন্সটাগ্রাম একাউন্ট থেকে গত ২৭ সেপ্টেম্বর করা একটি পোস্টে আলোচ্য ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, "প্রাচীন কাশীর ঐতিহ্য সত্যিই অনন্য এবং আজও তা অব্যাহত রয়েছে। ৫০০ বছরেরও বেশি পুরনো এমন একটি ঐতিহ্য হল কাশীর অসাধারণ রামলীলা, যা সকলকে বিস্মিত করে এবং বলে যে এটি কেবল বাবা বিশ্বনাথের শহরেই সম্ভব। লাট ভৈরব রামলীলায়, একটি ঐতিহ্য অব্যাহত রয়েছে যেখানে লাট ভৈরব মন্দিরের মঞ্চে, মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যরা একদিকে নামাজ পড়েন, অন্যদিকে রামচরিতমানসের শ্লোকগুলি প্রতিধ্বনিত হয়। এই ছবিটি আরও গভীরভাবে ছাপ ফেলে যখন হিন্দু এবং মুসলিম উভয়ই এই শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য রক্ষার জন্য একত্রিত হন। রামলীলা কমিটির প্রধান কথক দয়াশঙ্কর ত্রিপাঠী ভাগ করে বলেছেন যে শ্রী লাট ভৈরব রামলীলা কমিটির জয়ন্ত নেত্র ভাঙ লীলা সর্বদা অসাধারণ। এই দিনে, যখন রামচরিতমানসের শ্লোকগুলির মন্ত্রোচ্চারণ অব্যাহত থাকে এবং নাটকের সংলাপ এগিয়ে যায়, একই সাথে মুসলিম ভাইয়েরা আজানের সাথে তাদের নামাজ সম্পন্ন করেন। এই রীতি প্রায় ৫৭৪ বছর ধরে অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার রামলীলার দশম দিন ছিল। বিকেল ৫:৪৫ মিনিট নাগাদ, মন্দিরের মঞ্চে নামাজ এবং রামলীলা একসাথে অনুষ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথে উভয় ধর্মের অনন্য ঐক্য প্রত্যক্ষ করা গেল। অন্যান্য স্থানে মন্দির-মসজিদ বিরোধ থাকা সত্ত্বেও, এখানকার ঐতিহ্য অক্ষত রয়েছে। নামাজ পড়তে আসা হাজী আউকাস আনসারি বলেন, যদিও বিরোধ বিদ্যমান, এখানে মানুষ সম্প্রীতির সাথে একসাথে বাস করে। প্রতি বছর রামলীলা মঞ্চস্থ হয় এবং উভয় সম্প্রদায় পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করে। এর ইতিহাস সম্পর্কে, রামলীলা কমিটির সভাপতি কানহাইয়া লাল যাদব ব্যাখ্যা করেছেন যে এই রামলীলা ১৫৪৩ সালে গোস্বামী তুলসীদাসের উপস্থিতিতে মেঘা ভগত দ্বারা শুরু হয়েছিল। তিনি কাশীর লাট ভৈরব বরুণ সঙ্গমে আদি রামলীলা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আজও একই ঐতিহ্য অব্যাহত রয়েছে, রামলীলা ২১ দিন ধরে চলে। (অনূদিত)"। ইন্সটাগ্রাম পোস্টটি দেখুন--
এছাড়া শামানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, নিউজকাইন্ড ইন্ডিয়াসহ একাধিক ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওটি সম্পর্কে একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। ভারতের উত্তরপ্রদেশের বেনারসে ধর্মীয় সম্প্রীতির স্মারক হিসেবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রামলীলা ও ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের নামাজ একসাথে অনুষ্ঠান চলাকালে আলোচ্য ভিডিওটি ধারণ করা হয়।
সুতরাং ভারতের উত্তরপ্রদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতির স্মারক হিসেবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রামলীলা ও ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের নামাজ একসাথে অনুষ্ঠিত হওয়ার ভিডিওকে বাংলাদেশের বলে দাবি করে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।