জিয়া উদ্যানে ধারণকৃত এই ভিডিওটি আওয়ামী লীগ নেতার লাশ ঝুলিয়ে রাখার নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, জিয়া উদ্যানে ধারণকৃত এই ভিডিওটিতে উপস্থিত ব্যক্তি বেঁচে আছেন এবং নিজেই নিজেকে আঘাত করছিলেন।

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, রাজধানীর জিয়া উদ্যানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরের উপর আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা করে তার লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২০ "Abdul Karim" নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে ভিডিওটি শেয়ার করে বলা হয়, "জিয়া উদ্যানে জিয়ার কবরের উপর আওয়ামী লীগ নেতার লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে এ হল নতুন বাংলাদেশ".."। স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। জিয়া উদ্যানে ধারণকৃত আলোচ্য ভিডিওটিতে উপস্থিত ব্যক্তি মারা যাননি বরং বেঁচে আছেন। এছাড়াও ভিডিওটিতে ওই ব্যক্তিকে নিজের শরীরে আঘাত করতে দেখা যায়।
আলোচ্য ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম কেটে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে গত ১৯ সেপ্টেম্বর 'Riyad Talukdar' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে ভিন্ন দিক থেকে ধারণকৃত আলোচ্য ভিডিওটির মত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, "আজ জিয়া উদ্যানে দৃশ্য উন্মোচিত হয়েছে নতুন নিয়মে! যা সকলকে আকর্ষিত করেছে! হঠাৎ ঝুলন্ত মানব প্রতিবিম্ব দেখতে পাওয়া যায়! সকলের এখানে অবাক করা দৃশ্য। কী করছে? কী করছে? জিগ্যেস করতে করতে বের হয়ে আসে মোবাইল চুরি করে গণপিটুনির ভয়ে কৌশলে অবলম্বনে আটকে আছে। মানুষের হইচইয়ে নিজের বুকেই নিজে ছু*রি আঘাত করে বসে😅। গণপ্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত নানা নাটকীয়তায় নিচে নামিয়ে আনা হয়!" স্ক্রিনশট দেখুন--
আরো সার্চ করে গত ১৯ সেপ্টেম্বর 'Bangladesh News Express' নামে একটি ফেসবুক পেজে পোস্ট করা আরেকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা থাকতে দেখা যায়, "জিয়া উদ্যানে মোবাইল চু*রি করে গণ"পি"টু"নির ভয়ে, কৌশলে দঁড়ি দিয়ে শহীদ জিয়ার মাজারে ঝুলে আছে। ঝুলন্ত অবস্থায় এক পর্যায়ে নিজের বুকে নিজেই ছু*রি*র আঘাত করে বসে!গণজিয়া উদ্যানে মোবাইল চু*রি করে গণ"পি"টু"নির ভয়ে, কৌশলে দঁড়ি দিয়ে শহীদ জিয়ার মাজারে ঝুলে আছে। ঝুলন্ত অবস্থায় এক পর্যায়ে নিজের বুকে নিজেই ছু*রি*র আঘাত করে বসে!গ'ণ'প্র'চে'ষ্টা'য় শেষ পর্যন্ত নানা তাকে নিচে নামিয়ে আনা হয়।" ওই ভিডিওতে আলোচ্য ভিডিওটির ব্যক্তিকেই জিয়াউর রহমানের মাজারের ভেতরের একটি স্থানে একটি দড়ি ধরে ঝুলে থাকতে এবং ছুরির সাহায্যে নিজের পেটে আঘাত করতে দেখা যায়। এসময়ে ওই ব্যক্তিকে নিজের শরীরে ছুরিকাঘাত করতে দেখে নিচে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিদেরকে চিৎকার করতে শোনা যায়। ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ওয়েবসাইটে গত ২০ সেপ্টেম্বর "জিয়ার সমাধিসৌধ থেকে ঝুলন্ত ব্যক্তির ভিডিও নিয়ে নানা গুঞ্জন, যা জানাচ্ছে পুলিশ" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে আলোচ্য ভিডিওটির ব্যাপারে বলা হয়, "রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধি সৌধের উঁচু খিলান থেকে পায়ে দড়ি প্যাঁচানো অবস্থায় একটি লোক ঝুলছে, আর নিচে অনেক লোকজন হইচই করছে–এরকম একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থক অনেকে ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করছেন, তাদের একজন কর্মীকে ‘হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে’। তবে পুলিশ বলছে, একজন লোক সেখানে ‘আত্মহত্যা’ করতে উঠেছিলেন। পরে উপস্থিত লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়, পরে তিনি বাড়ি ফিরে গেছেন। শুক্রবার ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়া সাত সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, পায়ে দড়ি প্যাঁচানো অবস্থায় লোকটি ঝুলছেন। তিনি এক হাতে দড়িটি ধরে রেখেছেন, আর নিচ থেকে অনেকে দেখছেন। একজনকে বলতে শোনা যায়, “কোপ দিছে পেটে, রক্ত বাইর হয়ে গেছে।”"
এছাড়াও, বিডিনিউজের ওই প্রতিবেদনে শেরেবাংলা নগর থানার ওসি ইমাউল হক এবং তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ইবনে মিজানের বরাতে আরো জানানো হয়, এক ব্যক্তি ছুরি-চাকু নিয়ে আত্মহত্যা করতে ওই স্থানে যান। তবে এ ঘটনায় থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। ওই ব্যক্তিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন অনুরোধ করে নামিয়ে আনে। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তিনি বাড়ি ফিরে যান। লোকটির পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য ভিডিওটিতে দেখানো ব্যক্তিকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়নি বরং ওই ব্যক্তি নিজেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে জিয়াউর রহমানের মাজারের উপরে অবস্থান নেন এবং নিজের শরীরে আঘাত করেন।
সুতরাং রাজধানীর জিয়া উদ্যানে জিয়াউর রহমানের মাজারে ঘটা ভিন্ন ঘটনার ভিডিওকে আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখার ভিডিও বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।