মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে ঝুলিয়ে পেটানোর এই ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় বরং পাকিস্তানের রাওয়ালপিণ্ডির একটি মাদ্রাসায় ধারণ করা হয়।

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একজন শিক্ষার্থীকে ঝুলিয়ে রেখে নির্যাতনের একটি ভিডিও শেয়ার করে ভিডিওটি বাংলাদেশের একটি মাদ্রাসায় ধারণ করা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৭ এপ্রিল 'Arif Al Azad' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে একজন শিক্ষার্থীকে ঝুলিয়ে রেখে পিটানোর একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়, "বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুলোতে এভাবেই জান্নাতের টিকিট দেয়া হয়।" ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীকে ঝুলিয়ে রেখে নির্যাতনের এই ভিডিওটি বাংলাদেশের কোনো মাদ্রাসার নয় বরং পাকিস্তানের রাওয়ালপিণ্ডির একটি মাদ্রাসার ঘটনা।
ভিডিওটির ব্যাপারে জানতে ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম কেটে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে পাকিস্তানভিত্তিক গণমাধ্যম Ary News-এর ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ২৮ জুন "Child hung upside down in Rawalpindi Madrassah" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পাকিস্তানের রাওয়ালপিণ্ডির পাশে অবস্থিত একটি মাদ্রাসায় এক শিশুকে উল্টো করে ঝুলিয়ে শাস্তি দেওয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় শাস্তি হিসেবে একটি শিশু শিক্ষার্থীকে পায়ের গোড়ালিতে বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয় এবং ছেলেটিকে বার বার ক্ষমা প্রার্থনা করতে দেখা যায়। ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর রাওয়ালপিণ্ডির সাদিকাবাদের পাশে অবস্থিত তালিমুল কুরআন নামে ওই মাদ্রাসাটির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিকে রাওয়ালপিণ্ডি পুলিশ আটক করে। ভিডিওতে যে শিশুটিকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে তারও খোঁজ পাওয়া গেছে। শিশুটির নাম আবু বকর। স্ক্রিনশট দেখুন--
আরো কি-ওয়ার্ড সার্চ করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক গণমাধ্যম গালফ টুডে'র ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ২৮ জুন "Pakistani police solve the case of boy hanged upside down, beaten in seminary" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচ্য ভিডিওটির মত একটি স্থিরচিত্র খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি মাদ্রাসায় এক শিক্ষার্থীকে উল্টো করে ঝুলিয়ে পিটানোর দৃশ্য পুলিশের নজরে এসেছে। পুলিশ নির্যাতনকারী ওই শিক্ষককে আটক করেছে। ঘটনার প্রায় ৬ মাস পরে রাওয়ালপিণ্ডির সাদিকাবাদ এলাকায় অবস্থিত ওই মাদ্রাসা থেকে নুর মোহাম্মদ নামে এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও ভিডিওটি সম্পর্কে একই তথ্যসহ প্রতিবেদন প্রকাশ করে পাকিস্তানভিত্তিক গণমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, জিও নিউজ ও ডেইলি মোশন।
অর্থাৎ আলোচ্য ভিডিওটি বাংলাদেশের কোনো মাদ্রাসার নয়। পাকিস্তানের রাওয়ালপিণ্ডিতে অবস্থিত একটি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের সময় ভিডিওটি ধারণ করা হয়।
সুতরাং পাকিস্তানের মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীকে ঝুলিয়ে নির্যাতনের ভিডিওকে বাংলাদেশে ঘটনা বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।