ছবিটি কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে হামলার নয় বরং এআই জেনারেটেড
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে মিসাইল হামলার বলে প্রচারিত এই ছবিটি এআই প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি ও পেজ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম সামরিক ঘাঁটিতে ইরানের মিসাইল হামলার দৃশ্য দাবি করে একটি ছবি পোস্ট করা হচ্ছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৪ জুন 'Mamun Hossain Shishir' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ছবিটি পোস্ট করে উল্লেখ্য করা হয়, “ইরান জানে তারা একা জানে,এই যুদ্ধ কেবল যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে নয়,বরং হিজরায়েল,ব্রিটেন,ন্যাটো,পুরো পশ্চিমা সামরিক জোটের বিরুদ্ধে। জানে,চারপাশে মাথা নিচু করা আরব দালালদের ভিড়ে তার কোনো বন্ধু নেই। তবুও ইরান দাঁড়িয়ে আছে বুক চিতিয়ে, চোখে চোখ রেখে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে। ইনশাআল্লাহ মুসলমানদের বিজয় হবেই হবে😃" The US base in Qatar right now।” নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ছবিটি বাস্তব নয়। অর্থাৎ ছবিটি কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে ইরানের মিসাইল হামলার দৃশ্য নয় বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
আলোচ্য ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে গ্রহণযোগ্য কোনো মাধ্যমে দাবি অনুযায়ী ছবিগুলো বাস্তব হওয়ার বিষয়ে কিংবা ছবির বিষয়েও উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, আগুনের আলো পুরো শহরকে প্রায় সমানভাবে আলোকিত করছে, যা বাস্তব চিত্রে কঠিন। ধোঁয়ার আকৃতি অনেকটাই "সিমেট্রিকাল" এবং মেঘের মতো মসৃণ, বাস্তবে বিস্ফোরণ বা অগ্নিকাণ্ডের ধোঁয়া আরও এলোমেলো ও বিশৃঙ্খল হয়। ভবনগুলো দেখতে বাস্তবভিত্তিক হলেও কিছু ভবনের প্রোপোরশন বা প্যাটার্ন অসামঞ্জস্যপূর্ণ। অনেক ভবনের জানালা বা স্থাপত্য উপাদানের বিস্তারিত স্পষ্ট নয়। ডানদিকে দেখা যাচ্ছে এক বা একাধিক আলোর রেখা উঠে গেছে আকাশে, যেটি খুব নাটকীয় এবং প্রায় সিনেমাটিক।
পাশাপাশি, আলোচ্য ছবিটি এআই ব্যবহার করে তৈরি করা ছবির বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।
পরবর্তীতে, এআই ছবি শনাক্তের টুল 'হাইভ' ব্যবহার করে ছবিগুলো যাচাই করা হয়। টুলটি ছবিটিকে সম্ভাব্য এআই দ্বারা তৈরি ছবি হিসেবে ফলাফল প্রদান করেছে। ছবিটির ফলাফলের স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়া এআই ছবি শনাক্তের আরেক টুল 'সাইট ইন্জিন' ব্যবহার করেও ছবিটি যাচাই করা হয়। এই টুলটিও ছবিটিকে সম্ভাব্য এআই দ্বারা তৈরি ছবি হিসেবে ফলাফল প্রদান করেছে। ছবিটির ফলাফলের স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ আলোচ্য ছবিটি বাস্তব নয় বরং এটি এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, চলমান ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট যুক্ত হয়ে ইরানের পারমানবিক স্থাপনায় বিমান হামলা করে। এর প্রতিবাদে কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাটিতে পাল্টা মিসাইল ছোড়ে ইরান। কি ওয়ার্ড সার্চ করে “Iran attacks US air base in Qatar: What we know so far” শিরোনামে ‘Al Jazeera’ এক প্রতিবেদনে কাতারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে ইরান যেসব ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল, সেগুলো তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সফলভাবে প্রতিহত করেছে। স্ক্রিনশট দেখুন--

অর্থাৎ কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানঘাঁটিতে ইরানের মিসাইল হামলায় তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি এবং আলোচ্য ছবিটি কাতারে ইরানের হামলার নয়।
সুতরাং এআই প্রযুক্তিতে তৈরি ছবিকে কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাটিতে ইরানের মিসাইল হামলার দৃশ্য হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।