এটিএম মেশিন তুলে নিয়ে যাওয়ার ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়
যুক্তরাজ্যের সেন্সবেরি নামে একটি সুপারমার্কেটে চুরির উদ্দেশ্যে এসকেলেটর দিয়ে এটিএম মেশিন তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি ঘটে।

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এসকেলেটরের সাহায্যে এটিএম মেশিন তুলে চুরি করে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, ঘটনাটি বাংলাদেশে ঘটেছে। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৯ অক্টোবর 'H Abdul Korim' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে ভিডিওটি শেয়ার করে বলা হয়, "পুরো এটিএম বুথ ক্রেন দিয়ে টেনে নিয়ে গেলো চোর। এটা কেমন চোর রে বাবা🙄"। এছাড়াও, ভিডিওটির উপরে লেখা থাকতে দেখা যায়, "এটাই বাংলাদেশ এটা আফগানিস্তান নইরে বাবা "। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। যুক্তরাজ্যের বাকিংহ্যামশায়ার প্রদেশের মিল্টন কেনেস শহরের ব্রুকল্যান্ডস স্কয়ারে অবস্থিত সেন্সব্যারি নামে একটি সুপারমার্কেটে চুরির উদ্দেশ্যে এসকেলেটর দিয়ে এটিএম মেশিন তুলে নিয়ে যাওয়ার এই ঘটনাটি ঘটে। অর্থাৎ ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়।
আলোচ্য ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম কেটে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসির ওয়েবসাইটে গত ২৬ অক্টোবর "Watch: The moment gang rip cash machine from shop" শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদনে আলোচ্য ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, "ফুটেজে দেখা গেছে যে, একটি গ্যাং সেন্সবারির দোকানের সামনে থেকে একটি টেলিহ্যান্ডলার ব্যবহার করে একটি ক্যাশ মেশিন ছিনিয়ে নিয়েছে। বালাক্লাভা পরা, দলটি চুরি করা জিনিসটি অন্য একটি গাড়িতে চাপিয়ে দ্রুত গতিতে পালিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। রবিবার প্রায় 00:50 GMT তে মিল্টন কেইনসের ব্রুকল্যান্ডস স্কোয়ারে রাম রেইডের ঘটনাটি প্রত্যক্ষকারী এক ব্যক্তির ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। টেমস ভ্যালি পুলিশ তাদের তদন্তে সমর্থন করার জন্য যেকোনো প্রত্যক্ষদর্শীর কাছে আবেদন করেছে। (অনূদিত)"। স্ক্রিনশট দেখুন--
আরো সার্চ করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের ওয়েবসাইটে গত ২৮ অক্টোবর "Thieves use JCB to rip cash machine from Sainsbury’s store" শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদনেও আলোচ্য ভিডিওটির মত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, "বাকিংহামশায়ারের সেন্সবারির একটি দোকান থেকে নগদ টাকা তোলার জন্য মুখোশধারী একদল লোক একটি চুরি করা জেসিবি টেলিহ্যান্ডলার ব্যবহার করে। ২৬ অক্টোবর, রবিবার রাত ১২.৫০ টার দিকে মিল্টন কেইনসের ব্রুকল্যান্ডস স্কোয়ারে অবস্থিত দোকানটিকে লক্ষ্য করে এই দলটি। তারা জেসিবি ব্যবহার করে দোকানের সামনে থেকে এটিএমটি তুলে নিয়ে জানালা ভেঙে একটি সাদা পিক-আপ ট্রাকে তুলে নেয়। চোরেরা তখন দোকানের সামনে জেসিবিটি রেখে পালিয়ে যায়। রাম রেইডের ভিডিও ধারণকারী ক্যারোলিনা ওসউইসিমস্কা বলেন: “আমার মেয়ে গাড়ির শব্দ শুনতে পায় এবং এক মিনিট পরে সে চেইনস'র মতো কিছু শুনতে পায়। যখন সে তাকাল, তারা ইতিমধ্যেই এটিএমটি ভেঙ্গে বের করে ফেলছে। সে আমাকে ফোন করে এবং আমি রেকর্ডিং শুরু করি। আমার সঙ্গী পুলিশকে ফোন করে। সবকিছু এত দ্রুত চলছিল। তারা সম্ভবত পাঁচ থেকে সাত মিনিটের জন্য সেখানে ছিল।” টেমস ভ্যালি পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং যেকোনো প্রত্যক্ষদর্শীকে এগিয়ে আসার জন্য আবেদন করেছে। (অনূদিত)"। স্ক্রিনশট দেখুন--
আরো সার্চ করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডের ফেসবুক পেজ এবং ডেইলি মেইলের ওয়েবসাইটে প্রচারিত প্রতিবেদন থেকেও আলোচ্য ভিডিওটি সম্পর্কে একই তথ্য পাওয়া যায়।
অর্থাৎ আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য ভিডিওটি বাংলাদেশে নয় বরং যুক্তরাজ্যের বাকিংহ্যামশায়ার প্রদেশে ধারণ করা হয়েছে। প্রদেশটির মিল্টন কেনেস শহরে একদল চোর এসকেলেটরের সাহায্যে সেন্সব্যারি নামে একটি সুপারমার্কেটের কাঁচের দেয়াল ভেঙে এটিএম মেশিন চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময়ে ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে।
সুতরাং যুক্তরাজ্যে এসকেলেটরের সাহায্যে এটিএম মেশিন চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময়ে ধারণ করা ভিডিওকে বাংলাদেশের ঘটনার ভিডিও বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে যা বিভ্রান্তিকর।




