ভিডিওটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের সাথে হাতাহাতির নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, এটি মিয়ানমারের ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি ও কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মির মধ্যে হাতাহাতির ভিডিও।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপ থেকে একটি সামরিক উর্দি পরা ব্যক্তিদের মধ্যে হাতাহাতির ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সাথে হাতাহাতি ও বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেছে। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৯ জানুয়ারি 'আওয়ামী লীগ পরিবার' নামের একটি পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করে উল্লেখ্য করা হয়, "বাংলাদেশের সুনাম ধন্য এক বাহিনীর নাম বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ছিল। সেই সেনাবাহিনী সম্মান মাটির সাথে গেছে অবৈধ সরকার ইউনূস গং এবং সমন্বয়ক নামের কুলাঙ্গারদের পৃষ্ঠপোষকতায়।” নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে ভিডিওটি মিয়ানমারের দুটি সশস্ত্রগোষ্ঠী ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) ও কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মি (কেআইএ) মধ্যকার হাতাহাতির ঘটনার।
ভিডিওটির কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে “Part 1 အချင်းချင်းချကုန်ပီဟ #army #military #myanmar” শিরোনামে ‘စစ်ရူံးဘဘမင်းအောင်လိူင်’ নামে বার্মিজ ভাষার একটি ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ২৮ জানুয়ারি প্রকাশিত ভিডিওটির সঙ্গে ফেসবুকে ভাইরাল দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে উল্লেখ্য করা হয়, ‘আর্মি’, ‘মিলিটারি’ এবং ‘মিয়ানমার’। পাশাপাশি বার্মিজ ভাষায় লেখা হয়, ‘প্রথম পর্ব: একে অপরের সঙ্গে লড়াই।’ এই ভিডিওতে উভয়ের মধ্যে ভিন্ন একটি ভাষায় চিৎকার করতে শোনা যায়। যেটি স্পষ্টভাবে শুনলে বোঝা যায়, এর সঙ্গে বাংলা ভাষার মিল নেই। ভিডিওটির স্ক্রিনশট দেখুন--
পরবর্তীতে ইউটিউব চ্যানেলটিতে গিয়ে ‘২য় পর্ব’–এর ভিডিও পাওয়া যায়। যেটি একই দিন প্রকাশিত করা হয়। এই ভিডিওটির শিরোনামেও আর্মি, মিলিটারি এবং মিয়ানমার লেখা দেখা যায়। এবং বার্মিজ ভাষায় লেখা হয়, ‘পার্ট ২: কেআইএ এবং টিএনএলএ আঞ্চলিক বিরোধ।’ স্ক্রিনশট দেখুন--
প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ‘Arakha Youtube Channel’ এবং ‘မှိုင်းဝေ (စစ်သတင်းများ)’ ইউটিউব চ্যানেলেও একই ধরণের ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
পাশাপাশি, কি-ওয়ার্ড সার্চ করে “Anti-junta groups confronting one another but avoiding armed clashes in northern Shan State” শিরোনামে ‘Mayanmar Now’ ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। যেখানে বলা হয়, ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এবং কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মি (কেআইএ) নামক মিয়ানমারের দুটি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রতি সংঘর্ষের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। দুই গ্রুপের কয়েকজন সদস্যের বরাত দিয়ে বলা হয়, ঘটনাটি উত্তর শান রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মতবিরোধের কারণে ঘটেছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
নিচে ‘စစ်ရူံးဘဘမင်းအောင်လိူင်’ ইউটিউব ভিডিওর স্ক্রিনশট (বামে) ও ফেসবুকে আলোচ্য ভিডিওর স্ক্রিনশটের (ডানে) মিল দেখুন পাশাপাশি--
অর্থাৎ ভিডিওটি মিয়ানমারের বিবাদমান দুটি সশস্ত্রগোষ্ঠীর মধ্যে হাতাহাতির ঘটনার, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে নয়।
সুতরাং মিয়ানমারের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যকার হাতাহাতির ভিডিওকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে হাতাহাতি ও বিশৃঙ্খলার বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।