ভিডিওটি হিন্দু বাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনার নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, বিরোধের জেরে বিএনপির একপক্ষ অপরপক্ষের বাড়িঘরে আগুন দেয় এবং আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘরগুলো মুসলিমদের।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন আইডি থেকে আগুন লাগানোর একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশে ইসলামপন্থীরা হিন্দুদের বসতবাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে। এরকম দুটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ৮ জানুয়ারি ‘Jitesh Debnath’ নামক আইডি থেকে ভিডিওটি পোস্ট করে উল্লেখ করা হয়, “বাংলাদেশ থেকে আরেকটি হৃদয় বিদারক খবর...💔 বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর জ্বা*লিয়ে দেওয়া হচ্ছে... বাগেরহাট জেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে অবস্থিত কুলিয়াধর গ্রামে হিন্দু দের বাড়ি ঘরে আগুন দিয়েছে ইসলামপন্থীরা...💔” নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, বাড়িঘরে অগ্নিকাণ্ডের এই ভিডিওটি সাম্প্রদায়িক নয়। বাগেরহাটে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের পর একপক্ষ আরেক পক্ষের বাড়িঘরে আগুন দেয় এবং ভিডিওতে দৃশ্যমান আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘরগুলো মুসলিমদের।
ভাইরাল ভিডিওটির কি ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘আমাদের বাগেরহাট’ নামক একটি ফেসবুক গ্রুপে একটি ভিডিও পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। যেই ভিডিওটির সঙ্গে ফেসবুকে ভাইরাল দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। যেখানে উল্লেখ্য করা হয়, এই মুহূর্তে বাগেরহাট চুরুলিয়া বিষ্ণুপুর কুলিয়াধার ব্যাপক সং*ঘর্ষ চলছে বাড়িঘরে আ*গুন। বাগেরহাটে চুরুলিয়া বিষ্ণুপুর ওয়ার্ড বিএনপি'র সভাপতি পদকে কেন্দ্র করে। মুস্তাফিজ মেম্বার ও রুহুল মেম্বারের দুই গ্রুপের ব্যাপক সং*ঘর্ষ ৭/৮বাড়িতে আ*গুন। স্ক্রিনশট দেখুন--
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে “বাগেরহাটে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ ৮ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, আহত ২০” শিরোনামে ‘ইনকিলাব’ পত্রিকার অনলাইনে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি ৯ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়। যেখানে ব্যবহৃত ছবিটির সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওর সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাগেরহাটে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার বিকাল থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কুলিয়াদাইড় গ্রামে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় ৮ বাড়ি ও কয়েকটি মটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। দফায়-দফায় হামলায় নারীসহ ২০জন আহত হয়েছে। তাদের মথ্যে ৬জনকে বাগেরহাট ও খুলনার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
উক্ত প্রতিবেদনে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শেখ রুহুল আমীনসহ তার ৮ ভাইয়ের বাড়িতে আগুন দিয়েছে প্রতিপক্ষ। প্রতিবেদনে উল্লিখিত উভয়পক্ষের নাম ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের নাম থেকে বিষয়টি স্পষ্ট যেধারণা পাওয়া যাচ্ছে, তারা সবাই মুসলিম। এই প্রতিবেদন থেকে উক্ত ঘটনায় কোনো হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ জড়িত থাকা বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ কোনো হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়নি বরং বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনার এক পর্যায়ে এক পক্ষ অপরপক্ষের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়ার ঘটনার ভিডিও এটি।
সুতরাং বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের এক পর্যায়ে এক পক্ষ অপরপক্ষের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনাকে হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।