পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতে যুক্ত করার বক্তব্যটি বাংলাদেশের কারো নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, গতবছর ভারতের ত্রিপুরায় এক বিক্ষোভ মিছিলে দেয়া বক্তব্যকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বলে প্রচার করা হচ্ছে।

সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে এক কিশোরী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ উঠে। পরে ভিকটিমকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে স্বজনেরা। ঘটনায় জড়িত একজনকে পুলিশ আটক করেছে। এ ঘটনার বিচার ও বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’ খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে অবরোধ পালন করে। এ সময় ঢাকা-খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি, খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে এবং টায়ার জ্বালিয়ে, গাছের গুঁড়ি ফেলে বিক্ষোভ হয়।
এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করা হচ্ছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, জনতার সামনে এক ব্যক্তিকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতের সাথে যুক্ত করার দাবি করতে দেখা যায়। দাবি করা হচ্ছে, ওই ব্যক্তি পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান আন্দোলন থেকে এই বক্তব্য দিয়েছেন। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর ‘Tareq Miazee’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, “এই হলো শান্ত পাহাড় সবসময় অশান্ত করার নীল চাহিদা...আমাদের সেনাবাহিনী যে মাঝে মাঝে তাঁদের দৌড়ানি দেয় কেন দেয়......”। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন —
এছাড়াও কয়েকটি সংবাদ বিষয়ক পেজে সম্প্রতি ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ভিডিওর সময় কিংবা স্থান উল্লেখ না করার ফলে সাধারণ ব্যবহারকারীগণও বিভ্রান্তিকর পোস্ট করেছেন। দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে। সংবাদ বিষয়ক পেজের পোস্ট দেখুন এখানে (বার্তা বাজার), এখানে ও এখানে। পোস্টগুলোর কোলাজ দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি বিভ্রান্তিকর। ভিডিওটি সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামের দেওয়া কোনো বক্তব্যের নয় বরং এক বছর আগের (২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের) ভারতের ত্রিপুরায়; বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলের।
সংশ্লিষ্ট কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আলোচ্য ভিডিওটির একটি স্থিরচিত্র সহ একটি ফেসবুক পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ভিডিওটা গতবছরের ভারতের। যারা বিক্ষোভ, মানববন্ধন করতেছে তারা ভারতীয় নাগরিক (সংক্ষেপিত)। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন --
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী অনুসন্ধান করে ফেসবুকে ‘ভয়েস অফ সিএইচটি’ নামক একটি পেজে ২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির সাথে সম্প্রতি ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।
পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় প্রাপ্ত ভিডিওটি (মূল সংস্করণ) থেকে ফেসবুকে সম্প্রতি প্রচারিত ভিডিওটি মূলত ক্রপ করে প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওটির পোস্টে উল্লেখ করা হয়, পার্বত্য চট্রগ্রামকে ভারতের সাথে অন্তরভুক্ত করার দাবি এবং পাহাড়ে চারটি দল ঐক্য না হলে ত্রিপুরাবাসিরা সহয়তা দিবেনা বলে সমাবেশ থেকে হুশিয়ারি ভিডিও ......। ভিডিওটির স্ক্রিনশট দেখুন —
ভিডিও সংযুক্ত পোস্টের ক্যাপশনে তাদেরকে ত্রিপুরাবাসী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়; ভিডিওতে মাইক হাতে থাকা ব্যক্তি বলছেন- এখানে থেকে (ত্রিপুরা) আমরা আওয়াজ তুলছি ...যতক্ষণ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেনা ততক্ষণ অব্দি সেখানে (পার্বত্য চট্টগ্রামে) সেখানে সেনাশাসন এবং গণহত্যা বন্ধ করতে হবে (সংক্ষেপিত)।
একটি ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠানের আর্কাইভ থেকে দেখা যায়, ‘ভয়েস অফ সিএইচটি’ পেজটি থেকে ত্রিপুরায় আয়োজিত সংশ্লিষ্ট মিছিলের সরাসরি সম্প্রচারও করা হয়েছিল। এমনকি আলোচ্য প্রচারিত ভিডিওতে দেখতে পাওয়া ব্যানারে সমাবেশের স্থানের নামের স্থলে 'ত্রিপুরা, ভারত' লেখা দেখা যায়। দেখুন --
অর্থাৎ ভিডিওটি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের ত্রিপুরায় ধারণ করা।
উল্লেখ্য ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের ত্রিপুরায় পার্বত্য চট্টগ্রামের সহ আরো কিছু ইস্যুতে বিভিন্ন বিক্ষোভ মিছিলের সংবাদ ও ভিডিও ফুটেজ সে-সময়ে দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করা হয় (১, ২, ৩, ৪)।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে এক বছর আগের ভারতের ভিডিও সম্প্রতি বাংলাদেশের ঘটনার হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।