ছবিগুলো পুরোনো ভিন্ন ঘটনার, বিএনপি-জামায়াতের সংঘর্ষের ছবি নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ছবিগুলো নোয়াখালীর সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট নয় বরং বেশ পুরোনো ভিন্ন দুটি ঘটনার।

গত ১৯ অক্টোবর নোয়াখালীর সদর উপজেলার নেয়াজপুর ইউনিয়নের কাশেম বাজার জামে মসজিদে ছাত্রশিবিরের আয়োজিত একটি প্রোগ্রামকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপি ও শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একসাথে কয়েকটি ছবি যুক্ত করে সেগুলোকে নোয়াখালীর আলোচ্য ঘটনার পরে মসজিদের ভেতরের দৃশ্যের বলে প্রচার করা হয়েছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২০ অক্টোবর ‘Md Shahparan Sani’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিগুলো পোস্ট করা হয়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, “এটা কোন ফিলিস্তিনের হামলা গাজার কোন মসজিদ না এটা নোয়াখালী সদর উপজেলা, বিএনপির জামায়াতে হামলার শিকার এই মসজিদ। তারা মসজিদকে তাদের রাজনৈতিক কার্যালয়ে পরিনত করছে। আল্লাহ তদেরকেও ছাড়বে না”। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। প্রচারিত চারটি ছবির তিনটিই নারায়ণগঞ্জের তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে গ্যাস লাইনের লিকেজ সহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি কারণে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনার চিত্র। অন্য ছবিটি ২০২১ সালে আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে একটি শিয়া মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনার।
ছবিগুলোর প্রত্যেকটি আলাদাভাবে সার্চ করা হয়েছে। প্রথম ছবিটি রিভার্স সার্চের মাধ্যমে দৈনিক জনকন্ঠের অনলাইনে ২০২০ সালের ০৬ সেপ্টেম্বর "নারায়নগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশের মামলা" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে হুবহু ছবিটি উক্ত ঘটনার চিত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঘটনাটির বিষয়ে গণমাধ্যম বরাতে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে ২০২০ সালের ০৪ সেপ্টেম্বর রাতে ইশার নামাজ শেষে গ্যাস লাইনের লিকেজ সহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি কারণে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনার পরের চিত্র (সংক্ষেপিত)। প্রচারিত ছবি (বামে) ও দৈনিক জনকন্ঠের অনলাইনের ছবিযুক্ত প্রতিবেদনের স্ক্রিনশটের (ডানে) পাশাপাশি তুলনা দেখুন--
দ্বিতীয় ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ এর মাধ্যমে জার্মান গণমাধ্যম ‘ডয়েচে ভেলে’-তে ২০২১ সালের “Afghanistan: Multiple deaths in mosque blast” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে হুবহু ছবিটি উক্ত ঘটনার বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, 'আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে একটি শিয়া মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এটি সম্ভবত একটি আত্মঘাতী হামলা ছিল' (অনূদিত ও সংক্ষেপিত)। প্রচারিত ছবি (বামে) ও ডয়েচে ভেলের ছবিযুক্ত প্রতিবেদনের স্ক্রিনশটের (ডানে) পাশাপাশি তুলনা দেখুন--
তৃতীয় ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ এর মাধ্যমে 'দৈনিক ইত্তেফাক’ -এর অনলাইনে ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর “নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের কারণ চিহিৃত করেছে তদন্ত কমিটি” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে হুবহু ছবিটি উক্ত ঘটনার বলে উল্লেখ করা হয়েছে [ ঘটনাটির বিষয়ে প্রথম ছবিতেই উল্লেখ করা হয়েছে ]। প্রচারিত ছবি (বামে) ও দৈনিক ইত্তেফাকের ছবিযুক্ত প্রতিবেদনের স্ক্রিনশটের (ডানে) পাশাপাশি তুলনা দেখুন--
চতুর্থ ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ এর মাধ্যমে ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ডেইলি স্টার’ -এর অনলাইনে ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর “Narayanganj Mosque Blast: Admin probe blames Titas, mosque committee” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে হুবহু ছবিটি উক্ত ঘটনার বলে উল্লেখ করা হয়েছে [ ঘটনাটির বিষয়ে প্রথম ছবিতেই উল্লেখ করা হয়েছে ]। প্রচারিত ছবি (বামে) ও দ্য ডেইলি স্টারের ছবিযুক্ত প্রতিবেদনের স্ক্রিনশটের (ডানে) পাশাপাশি তুলনা দেখুন--
অর্থাৎ ছবিগুলো পুরোনো ও ভিন্ন দুটি ঘটনার।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে সম্প্রতি নোয়াখালীতে মসজিদে প্রোগ্রামকে কেন্দ্র করে সংঘঠিত হামলার সাথে সংযুক্ত করে পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।




