হাদিকে গুলিকারী ব্যক্তির সাথে সাদিক কায়েমের এই ছবিটি বাস্তব নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, আলোচ্য ছবিটি এআই প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি প্রচার করে বলা হয়েছে- ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় অভিযুক্তের সাথে ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েমের এক সাথে চা খাওয়ার ছবি। এরকম একটি পোস্ট দেখুন এখানে। এছাড়াও একই দৃশ্যে সাদিক কায়েমের সাথে বিএনপি-ছাত্রদলের নেতাদের ছবি যুক্ত করে অভিযুক্তের সাথে তাদের চা খাওয়ার দৃশ্য বলেও প্রচার করা হয়েছে; দেখুন এখানে।
গত ১৩ই ডিসেম্বর ‘জয় বাংলার চেতনা বাহরাইন শাখা’ নামক একটি পেজ থেকে ছবিটি পোস্ট করা হয়। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও একইদিনে ১৩ই ডিসেম্বর ‘Formanul Islam’ নামক একটি প্রোফাইল থেকে বিএনপি-ছাত্রদলের নেতাদের ছবি যুক্ত করে অভিযুক্তের সাথে তাদের চা খাওয়ার দৃশ্য বলে কয়েকটি ছবি পোস্ট করা হয়। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন --
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ছবিগুলো বাস্তবে ধারণ করা নয়। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় অভিযুক্তের সাথে সাদিক কায়েমের এক সাথে চা খাওয়ার ছবি সহ অভিযুক্তের সাথে বিএনপি-ছাত্রদলের নেতাদের চা খাওয়ার দৃশ্য বলে প্রচারিত ছবিগুলো এআই প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে।
আলাদা আলাদা করে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে গ্রহণযোগ্য কোনো মাধ্যমে ছবিগুলোর বিষয়ে কোনো উল্লেখযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। ফলে ছবিগুলো এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার বিষয়টি যাচাই করে দেখা হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে একের অধিক আলাদা আসল ছবি ব্যবহার করে একই দৃশ্যে তাদের জুড়ে দেওয়ার উদাহরণ বৃদ্ধি পেয়েছে। নিখুঁত এবং সহজলভ্য হওয়ায় এই ধরণের সরাসরি বা ছবি থেকে ছবি তৈরির ক্ষেত্রে গুগলের জেনারেটিভ টুল 'জেমিনি (Gemini)' ব্যবহারের প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। জেমিনির ২.৫ ফ্ল্যাশ বা তার চেয়ে উন্নত মডেলে (ছবির ক্ষেত্রে ন্যানো ব্যানানা বলা হয়) আগের চেয়েও বেশি বাস্তবের ন্যায় যে কোনো ধরণের ছবি তৈরি করতে সক্ষম।
ন্যানো ব্যানানা (Nano Banana) হলো গুগল-এর Gemini 2.5 Flash Image মডেলটির কোডনেম বা অভ্যন্তরীণ ডাকনাম। এই মডেলটি মূলত একটি উন্নত এআই ইমেজ এডিটিং মডেল যা টেক্সট কমান্ড বা বর্ণনা ব্যবহার করে ছবি তৈরি এবং সম্পাদনা করতে পারে। সর্বশেষ হালনাগাদে জেমিনির মডেলগুলোকে আরো উন্নত করা হয়েছে।
জেমিনি টুল দিয়ে তৈরি কিনা নিশ্চিত হতে গুগলেরই SynthID ডিটেকশন টুলে ছবিটিকে যাচাই করা হয়েছে। কেননা গুগলের জেনারেটিভ টুলগুলো তাদের ইমেজ কন্টেন্টে সাধারণ ওয়াটারমার্কিংয়ের পাশাপাশি 'SynthID' নামক এক ধরণের ওয়াটারমার্কিং ব্যবহার করে যা খালি চোখে শনাক্ত করা যায় না। তবে গুগলের SynthID ডিটেকশন টুল সেটি শনাক্ত করতে পারে।
এই শনাক্তকরণ টুলের মাধ্যমে সাদিক কায়েমের সাথে অভিযুক্তের বলে প্রচারিত ছবিটি যাচাই করলে 'গুগলের এআই ইমেজ জেনারেটিভ মডেল ব্যবহার করা হয়েছে' বলে ফলাফল দিয়েছে এবং ছবিতে SynthID শনাক্ত করেছে। দেখুন--
একই শনাক্তকরণ টুলের মাধ্যমে গত ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদ হাসানের সাথে অভিযুক্তের বলে প্রচারিত ছবিটি যাচাই করলে 'গুগলের এআই ইমেজ জেনারেটিভ মডেল ব্যবহার করা হয়েছে' বলে ফলাফল দিয়েছে এবং ছবিতে SynthID শনাক্ত করেছে। দেখুন--
আবিদ হাসানের সাথে অভিযুক্তের বলে প্রচারিত এই ছবিটি ব্যবহার করে একটি ফটোকার্ড তৈরি করে প্রচার করা হয়েছিল। ফটোকার্ডটির নিচে দেওয়া সামাজিক মাধ্যম ঠিকানা এবং বিজ্ঞাপনের অংশ দেখে বোঝা যায় এটি ব্যক্তি উদোগে তৈরি মিম ম্যাটেরিয়াল হিসেবে প্রচার করা হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে ফটোকার্ডটি বাস্তব ঘটনার দাবিতেই ছড়িয়ে পড়ে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা-৮ আসনের প্রার্থী মির্জা আব্বাসের সাথে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় অভিযুক্তের বলে প্রচারিত ছবিটি যাচাই করলে 'গুগলের এআই ইমেজ জেনারেটিভ মডেল ব্যবহার করা হয়েছে' বলে ফলাফল দিয়েছে এবং ছবিতে SynthID শনাক্ত করেছে। দেখুন--
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সাথে অভিযুক্তের বলে প্রচারিত ছবিটি যাচাই করলে 'গুগলের এআই ইমেজ জেনারেটিভ মডেল ব্যবহার করা হয়েছে' বলে ফলাফল দিয়েছে এবং ছবিতে SynthID শনাক্ত করেছে। দেখুন--
অর্থাৎ ছবিগুলো গুগলের এআই মডেল ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য সবগুলো ছবিতে হুবহু একই দৃশ্য দেখা গেছে। কয়েকটি ছবিতে ডান-বাম পাশ থেকে কিছু অংশ ক্রপ করে বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয়, একটি ছবি প্রথমে তৈরি করা হয়েছে সেই ছবিতে কেবলমাত্র অভিযুক্তের সামনের ব্যক্তিকে এআই দ্বারা পরিবর্তন করে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ছবি জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে এআই প্রযুক্তিতে তৈরি ছবি বাস্তবে ধারণ করা ছবি হিসেবে প্রচার করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর।




