পাবজি-ফ্রি ফায়ার ও টিকটক-লাইকিকে স্থায়ী বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়নি
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, পাবজি-ফ্রি ফায়ার তিন মাস বন্ধের নির্দেশ ও টিকটক-লাইকিকে কেন বন্ধ করা হবে না, জানতে চেয়েছেন আদালত।
আদালতের নির্দেশে বাংলাদেশ থেকে অনলাইন গেম ফ্রি ফায়ার ও পাবজি এবং টিকটক, বিগো লাইভ ও লাইকি চিরতরে বিদায় নিচ্ছে এমন একটি খবর সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি ও পেজ থেকে পোস্ট করা হয়েছে। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এই খবরটির কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে।
'Theputimaas' নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত ১৯ আগস্ট একটি পোস্টে বলা হয়, 'ব্রেকিং নিউজ আজকের হাইকোর্টের নির্দেশনায় বাংলাদেশ থেকে রাত ৯ টার পর থেকে চিরতরে বিদায় নিচ্ছে TikTok, Likee, PUBG, Free Fire'। পোস্টে খবরের উৎস হিসেবে কোন তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। দেখুন পোস্টটির স্ক্রিনশট--
অর্থাৎ সুত্রহীনভাবেই পোস্টে দাবি করা হচ্ছে উল্লেখিত গেম এবং অ্যাপসগুলো বাংলাদেশ থেকে রাত ৯ টার পর চিরতরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। একাধিক পেজ থেকে খবরটি একাধিক তারিখে পোস্ট করা হয়েছে, তাই 'আজ রাত ৯টা" বলতে ঠিক কোন দিনকে বোঝানো হয়েছে তাও পরিস্কার নয়। তবে এই পোস্টের ক্ষেত্রে পোস্টের তারিখ ১৯ আগস্ট দেখে স্বাভাবিকভাবে ধারনা করা যায় খবরটি এদিন রাত ৯ টা'কে বোঝানো হয়েছে। এছাড়া, কোন কোন খবরের সুত্র হিসেবে 'ডেইলি স্টার'কে উল্লেখ করা হয়েছে। দেখুন স্ক্রিনশট--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, খবরটি বিভ্রান্তিকর। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গত সোমবার অর্থাৎ ১৬ আগস্ট বাংলাদেশের সব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে পাবজি, ফ্রি-ফায়ারসহ ক্ষতিকর সব অনলাইন গেমস আগামী তিন মাস বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সাথে আদালত টিকটক, বিগো লাইভ ও লাইকির মতো লাইভ স্ট্রিমিং অ্যাপসগুলো বন্ধে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৪ জুন দেশের সব অনলাইন প্ল্যাটফর্মে টিকটক, বিগো লাইভ, লাইকি, পাবজি এবং ফ্রি ফায়ারের মতো গেমসগুলো বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হুমায়ুন কবির পল্লব এবং মোহাম্মদ কাউছার। ওই রিট আবেদনের শুনানি শেষে সোমবার এই নির্দেশ দেয়া হয়। এমন কিছু খবর দেখুন এখানে, এখানে।
গত ১৬ আগস্ট "পাবজি, ফ্রি-ফায়ারসহ ক্ষতিকর অনলাইন গেমস বাংলাদেশে সাময়িক বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের" শিরোনামে এক খবরে বিবিসি বাংলা অনলাইন রিটকারী আইনজীবী হুমায়ুন কবির পল্লবের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়,
হাইকোর্টের নির্দেশনায় অনলাইন গেমসগুলোকে রেগুলার মনিটরিং বা পর্যবেক্ষণ করার জন্য একটি কারিগরি কমিটি গঠন কেন করা হবে না এবং একই সাথে এ সম্পর্কিত একটি গাইডলাইন কেন করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। এছাড়া টিকটক, লাইকি, বিগো লাইভসহ অনলাইন লাইভ স্ট্রিমিং অ্যাপসগুলো কেন বন্ধের নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। এর জন্য ১০ দিনের রুল জারি করা হয়েছে।
পাশাপাশি, গতকাল ১৯ আগস্ট বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ দেশের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে পাবজি ও ফ্রি ফায়ারের মতো ক্ষতিকারক গেম বন্ধে লিখিত আদেশ প্রকাশ করেছেন বলেও খবর প্রকাশিত হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। গতকাল ঢাকা ট্রিবিউনে "অবিলম্বে বন্ধ পাবজি-ফ্রি ফায়ার, লিখিত আদেশে যা বললেন আদালত" শিরোনামে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, "তিন মাসের জন্য এসব গেম অনলাইনে বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। বিটিআরসিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।" এখানেও টিকটক ও লাইকির মত লাইভ স্ট্রিমিং অ্যাপসগুলো বন্ধের কোনো নির্দেশনা কথা উল্লেখ নেই।
অর্থাৎ অনলাইন গেম ফ্রি ফায়ার ও পাবজি এবং টিকটক, বিগো লাইভ ও লাইকির মতো লাইভ স্ট্রিমিং অ্যাপস চিরতরে বিদায় নিচ্ছে বলে করা দাবিটি সঠিক নয়। মূলত পাবজি ও ফ্রি-ফায়ারসহ ক্ষতিকর অনলাইন গেমস বাংলাদেশে সাময়িক অর্থাৎ ৩ মাস বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট, চিরতরে বন্ধের কোনো নির্দেশ দেয়া হয়নি। পাশাপাশি আদালত থেকে টিকটক, বিগো লাইভ ও লাইকির মতো লাইভ স্ট্রিমিং অ্যাপসগুলো বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়নি বরং বন্ধ করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে ১০ দিনের রুল জারি করা হয়েছে।
সুতরাং পাবজি-ফ্রি ফায়ার গেম ও টিকটক, লাইকি, বিগো লাইভ অ্যাপস চিরতরে বন্ধ হতে যাচ্ছে ফেসবুকে যে খবরটি প্রচার করা হচ্ছে; তা বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন।