ফরিদপুরে ছেলের ত্যাগ করা স্ত্রীকে বাবার বিয়ে করার খবরটি ভুয়া
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, গত জুলাই মাসে ভারতের উত্তরপ্রদেশের একটি খবরকে বাংলাদেশের ফরিদপুরের বলে দাবি করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।

ফরিদপুরে ছেলের ত্যাগ করা স্ত্রীকে বাবা বিয়ে করার একটি খবর সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি ও পেজ থেকে প্রচার করা হচ্ছে। অনলাইন পোর্টালগুলিতে একই খবরের সাথে বিয়ের সাঁজে একাধিক ছবি যুক্ত করতে দেখা গেছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর 'Mon Pakhi' নামের একটি আইডি থেকে একটি অনলাইন পোর্টালের লিংক পোস্ট করে বলা হয়, "ফরিদপুরে ছেলের ছেড়ে দেয়া স্ত্রী'কে বিয়ে করলেন বাবা!!"। হুবহু একই শিরোনামে প্রকাশিত অনলাইন পোর্টালের ওই খবরটির ডেটলাইন হিসাবে 'September 24, 2021'। অর্থাৎ দাবি করা হচ্ছে ঘটনাটি বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার এবং ফেসবুকে পোস্ট ও খবরের ডেটলাইন দেখে মনে হচ্ছে এই সপ্তাহের।
একই খবরের সাথে ভিন্ন অনলাইন পোর্টালে ফিচার ইমেজ হিসাবে যুক্ত করা দুটি ভিন্ন ছবি দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, খবরের শিরোনামটি বিভ্রান্তিকর। শিরোনামে ঘটনাটি বাংলাদেশের ফরিদপুরের বলে উল্লেখ করা হলেও খবরটির বিস্তারিত অংশে এরকম কোনো তথ্য দেয়া হয়নি। বরং খবরটির বিস্তারিত অংশে বলা হয়েছে, "ঘ'টনাটি ভারতের উত্তরপ্রদেশের। পরে ছেলেটি থানায় মা'মলা করলেও কোন নথি না থাকায় কিছুই করতে পারেনি। বি,সৌলি থানার এক কর্মকর্তা জানান, যুবকের প্রথমবিয়ের সময় দু'জনই অ'প্রা'প্ত ব'য়স্ক ছি,লেন। সে বিয়ের কো'নো নথিও নেই।" অর্থাৎ শিরোনামে যা বলা হয়েছে বিস্তারিত অংশে তার ভিন্ন তথ্য দেয়া হচ্ছে।
বিভিন্ন কিওয়ার্ড সার্চ করে দেখা গেছে, চলতি বছরের জুলাই মাসে সালে ভারতের একাধিক গণমাধ্যমে ভারতের উত্তরপ্রদেশের বদায়ূঁ জেলায় ছেলের প্রাক্তন স্ত্রীকে বাবার বিয়ে করার একটি খবর প্রকাশিত হতে দেখা গেছে। তন্মধ্যে ভারতের প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে "Viral: ছেলের প্রাক্তন স্ত্রীকে বিয়ে করলেন বাবা, সৎমাকে নিজের কাছে ফেরাতে দরবার যুবকের" শিরোনামে ২০২১ সালের ০৫ জুলাই এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটিতে উত্তরপ্রদেশের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে বলা হয় ,
"বদায়ূঁতে নিজের পরিবারকে ছেড়ে সম্ভল জেলায় আলাদা থাকতে শুরু করেছিলেন ওই যুবকের বাবা। পেশায় সাফাইকর্মী ৪৮ বছরের ওই ব্যক্তি সংসারে টাকাপয়সা পাঠানোও বন্ধ করে দেন। এর পর তাঁর ঠিকানা জানতে তথ্যের অধিকার আইনে (আরটিআই) মামলা রুজু করেন যুবক। তাতেই জানতে পারেন তাঁর 'নতুন মা'য়ের কথা। ২০১৬ সালে তাঁর সঙ্গেই বিয়ে হয়েছিল যুবকের। সে সময় দু'জনেই অপ্রাপ্তবয়স্ক। সে বিয়েও টিকেছিল মাস ছয়েক। স্বামীকে মদ্যপ বলে দাবি করে বিবাহবিচ্ছেদ করেন মেয়েটি।" এ সংক্রান্ত আরো কিছু খবর দেখুন এখানে, এখানে।
আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইনের খবরটি দেখুন এখানে
পাশাপাশি ভাইরাল খবরটি সাথে যুক্ত করা দুটি ছবির একটি প্রয়াত জনপ্রিয় কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ ও তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের। যাকে বিভ্রান্তিকরভাবে অখ্যাত অনলাইন পোর্টালের খবরের সাথে জুড়ে প্রচার করা হচ্ছে। তবে অন্য ছবিটির উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি বুম বাংলাদেশ। জাগোনিউজ-এ "হুমায়ূন-শাওনের বিয়েবার্ষিকী : বিয়ের গল্প শোনালেন শাওন" শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংযুক্ত হুমায়ূন আহমেদ ও তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন-এর বিয়ের ছবিটি দেখুন-
সুতরাং চটকদার শিরোনাম দিয়ে বিস্তারিত অংশে ভিন্ন তথ্য উল্লেখ করে ভারতের উত্তরপ্রদেশের একটি ঘটনাকে বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার দাবি করে একাধিক অনলাইন পোর্টালে প্রকাশ করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।