দেবেন্দ্র কলেজের শিক্ষিকা নয় বরং শিক্ষার্থীর নাচের ভিডিও এটি
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের এক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীর নাচের ভিডিওকে শিক্ষিকার বলে প্রচার করা হচ্ছে।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে একটি নাচের ভিডিও শেয়ার করে ভিডিওটিতে নাচ পরিবেশনকারী নারী মানিকগঞ্জ জেলায় অবস্থিত সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের শিক্ষিকা বলে দাবি করা হচ্ছে। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১৮ এপ্রিল 'Rajbari Media' নামে একটি ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হয়, "এই হচ্ছে সম্মানিত ম্যাডাম!! সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ, মানিকগঞ্জ!!" ভিডিওটিতে শাড়ি পরে একটি মেয়েকে স্টেজে গানের তালে নাচতে দেখা যায়। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। স্টেজে নাচ পরিবেশনকারী মেয়েটি সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের শিক্ষিকা নন বরং ওই কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
আলোচ্য ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ভিডিওতে নৃত্যরত নারীর পেছনের ব্যানার ও ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে যে তথ্য পাওয়া যায় সে অনুযায়ী, এটি ১৪৩০ বঙ্গাব্দ অর্থাৎ গেল বাংলা বছরের (বর্তমানে ১৪৩১ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাস চলছে) 'বসন্তবরণ ও পিঠা উৎসব' এর অনুষ্ঠানের ভিডিও; যা মানিকগঞ্জের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের দানবীর শহিদ রনদা প্রসাদ সাহা চত্বরে (নিচের স্ক্রিনশটে 'চত্বর' শব্দ ব্যতীত বাকী লেখা স্পষ্ট নয়, তবে ভিডিওটিতে অন্যান্য ফ্রেমে 'দানবীর শহিদ রনদা প্রসাদ সাহা' নামটি স্পষ্ট বোঝা যায়) অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচ্য ভিডিওটির একটি স্ক্রিনশট দেখুন--
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী মানিকগঞ্জের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের নামে থাকা ফেসবুকের সব গ্রুপ ও পেজ এবং কলেজটির ওয়েবসাইট অনুসন্ধান করে দেখে বুম বাংলাদেশ। প্রথমে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে "Govt: Debendra College, Manikganj [সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ, মানিকগঞ্জ]" নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি 'Sheikh Mohammad Rasel Ali' নামের একটি আইডি থেকে "বসন্তবরণ ও পিঠা উৎসব বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি।" লিখে পোস্ট করা একটি বিজ্ঞপ্তির ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, এটি মানিকগঞ্জের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ইস্যু করা হয়েছে এবং এতে ১৫ ফেব্রুয়ারির 'বসন্তবরণ ও পিঠা উৎসব' অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা জানানো হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রত্যেক বিভাগ থেকে দুই জন শিক্ষার্থীকে নাচ সহ বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়। এছাড়া, অনুষ্ঠানটি দানবীর শহিদ রনদা প্রসাদ সাহা চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানানো হয়। অর্থাৎ আলোচ্য ভিডিওটি যে অনুষ্ঠানের, এটি একই অনুষ্ঠানের আয়োজন সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি। উল্লেখ্য গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৪৩০ বঙ্গাব্দের ঋতু রাজ বসন্তের প্রথম দিন ছিল। স্ক্রিনশট দেখুন--
এর সূত্র ধরে ফেসবুকে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে 'Govt. Debendra College.University,Manikganj সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ মানিকগঞ্জ ' নামের একটি পেজ থেকে অনুষ্ঠানের দিন অর্থাৎ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পোস্ট করা একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে আলোচ্য ভিডিওটি থেকে ভিন্ন এক নারীকে নৃত্য পরিবেশন করতে দেখা যায়, তবে ভিডিওটিতে নৃত্যরত নারীর পেছনের ব্যানার ও ব্যাকগ্রাউন্ড পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত হওয়া যায় ভিডিওটি একই অনুষ্ঠানের। ফেসবুক পোস্টের ভিডিওটির একটি স্ক্রিনশট দেখুন--
পরে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের ওয়েবসাইটের নোটিশ সেকশনে সার্চ করে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি আপলোড করা একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়। বিজ্ঞপ্তিটিতে বলা হয়, "এই মর্মে অবগত করানো যাচ্ছে যে, গত ১৫-০২-২০২৪ তারিখে কলেজের বসন্ত বরণ ও পিঠা উৎসব অনুষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নৃত্য পরিবেশন করে এবং নৃত্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে অনেকে এই মর্মে গুজব ছড়ায় যে, নৃত্যটি কলেজের কোনো শিক্ষিকা পরিবেশন করেন। এটি মূলত একটি অপপ্রচার যা কলেজের ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করে। এ ধরণের অপপ্রচারে বিভ্রান্তি না হওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।" । বিজ্ঞপ্তিটির স্ক্রিনশট দেখুন--
উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলেছে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সরকারি দেবেন্দ্র কলেজে অনুষ্ঠিত 'বসন্তবরণ ও পিঠা উৎসব' এর একটি নৃত্যের ভিডিও ওই কলেজের শিক্ষিকার নৃত্য হিসেবে ভাইরাল হয়েছে, যা মূলত কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীর। যেহেতু একাধিক নারী শিক্ষার্থী ওই অনুষ্ঠানে একক নৃত্য পরিবেশন করেছেন, তাই এই বিজ্ঞপ্তিটিতে কোন নৃত্যের ভিডিও নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। তবে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের শিক্ষিকার (ম্যাডামের) নৃত্য হিসেবে আলোচ্য ভিডিওটিই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হতে দেখা গেছে। এ ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মুহম্মদ শরীফুল ইসলাম খানের সাথে যোগাযোগ করে বুম বাংলাদেশ। উক্ত বিজ্ঞপ্তিটি আলোচ্য ভিডিওটি সম্পর্কেই দেয়া হয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেন। এছাড়া, ওই অনুষ্ঠানে কলেজের শিক্ষার্থী ব্যতীত কোনো শিক্ষক বা শিক্ষিকার পক্ষ থেকে নাচ পরিবেশনা ছিল না বলেও জানান উপাধ্যক্ষ।
অর্থাৎ আলোচ্য ভিডিওটিতে নাচ পরিবেশনকারী নারী মানিকগঞ্জের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের শিক্ষিকা নন বরং তিনি ওই কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
সুতরাং দেবেন্দ্র কলেজের এক শিক্ষার্থীর নাচের ভিডিওকে কলেজের শিক্ষিকার নাচের বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।