শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনাটি হিজাব পরাকে কেন্দ্র করে নয়
ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের হামলা ও তাদের আটকের সময়ের ভিডিও এটি।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি থেকে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ভিডিওটি ভারতের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হিজাব পরিধান করায় তাদের উপর দমন-পীড়ন করার ভিডিও। এরকম দুটি পোস্ট দেখুন এখানে ও এখানে।
গত ১৪ এপ্রিল 'Md Amjad Hossain Sumon' নামের একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হয়, "হিজাব পড়াকে কেন্দ্র করে ভারতের বিশ্ব বিদ্যালয়ে চলছে দমন - পীড়ন।" ভিডিওটিতে হিজাব পরা কয়েকজন নারীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে এবং তাদের সহায়তায় টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে দেখা যায়। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। হিজাব পরিধান করার কারণে নয় বরং ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের হামলা ও তাদেরকে আটক করার সময়ে ধারণ করা ভিডিও এটি।
পোস্টে যুক্ত ভিডিওটির কি-ফ্রেম কেটে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আপডেট ও ভর্তিসংক্রান্ত তথ্য শেয়ার করে এরকম একটি ইন্সটাগ্রাম একাউন্ট 'duupdates' এ আলোচ্য ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, "দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা, যারা সিএএ-এর প্রতিবাদ করছিল, অভিযোগ করেছে যে তাদের আটক করা হয়েছে এবং তাদের বর্তমান অবস্থান অজানা। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর আয়োজিত বিক্ষোভের পর পুলিশ ৬০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যায়। প্রতিবাদে অংশ নেওয়া ছাত্রদের মধ্যে একজন বাদল জানিয়েছেন, দিল্লি পুলিশ সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সময় ছাত্রীসহ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে মারধর করেছে। অর্থাৎ ভিডিওটি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ধারণকৃত বলে ধারণা করা যায়। ইন্সটাগ্রাম পোস্টটি দেখুন--
ইন্সটাগ্রাম পোস্টটির সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে'র ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৩ মার্চ "Protest on CAA, 60 Delhi University Students Picked Up by Delhi Police | IND Today" শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটির শুরুতেই প্রথম ক্লিপে আলোচ্য ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির বর্ণনায় বলা হয়, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের উপরে হামলা ও মারপিট করে দিল্লি পুলিশ। এসময়ে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন থেকে প্রায় ৬০ জনকে আটক করা হয়। অর্থাৎ, ভিডিওটি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ধারণ করা হয়েছে। ভারতে সদ্য কার্যকর হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদেরকে মারপিটের ঘটনায় ওই ভিডিওটি ধারণ করা হয়। ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন--
পরবর্তীতে আরো কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ওয়েবসাইটে গত ১৩ মার্চ "Nearly 70 students detained at DU campus during anti-CAA protest" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন-২০১৯ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন আটক হয়েছেন। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, ভারতীয় গণমাধ্যম ইকোনোমিক টাইমস, হিন্দুস্থান টাইমস ও হিন্দু পোস্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদ থেকেও জানা যায় একই তথ্য। উল্লেখ্য গত ১১ মার্চ ভারতে CAA (Citizenship Amendment Act) বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন-২০১৯ কার্যকরের ঘোষণা দেয়া হয়। আইনটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেয় দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশি হামলা ও তাদের আটকের ঘটনা ঘটে।
অর্থাৎ ভিডিওটি ভারতের বহুল আলোচিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের হামলা ও তাদের আটকের ঘটনার। হিজাব পরাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
সুতরাং ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্ন ঘটনায় শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের মারামারি ও শিক্ষার্থীদের আটকের ঘটনার ভিডিওকে হিজাব পরার কারণে বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।