ইবতেদায়ি শিক্ষক-পুলিশ সংঘর্ষে নিহত হওয়ার বিভ্রান্তিকর দাবি প্রচার
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ইবতেদায়ি শিক্ষকদের মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটলেও নিহত হওয়ার কোন সংবাদ পাওয়া যায়নি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থ্রেডস’এ বিভিন্ন একাউন্ট থেকে পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত ইবতেদায়ি শিক্ষকদের মিছিলে পুলিশের গুলিতে দুইজন শিক্ষক নিহত হয়েছেন। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে। একই দাবিতে পোস্ট করা হচ্ছে ফেসবুকেও। এমন দুটি পোস্ট দেখুন এখানে ও এখানে।
গত ২৬ জানুয়ারি ‘abdurrazzaksujon’ নামক একাউন্ট থেকে পোস্ট করে উল্লেখ করা হয়, “আজ শাহবাগে পুলিশের গুলিতে নিহত শিক্ষক -২ জন আহত হয়েছে ১০০ শত উপরে শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড! আর শিক্ষক হলো মানুষ গড়ার কারিগর। সেই শিক্ষকের রক্তে আজ রক্তাক্ত শাহবাগ।” নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত ইবতেদায়ি শিক্ষকদের মিছিলে পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও জলকামান ব্যবহার করায় কয়েকজন আহত হয়েছেন, তবে কেউ নিহত হননি।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ভাইরাল দাবির প্রেক্ষিতে কোনো ধরণের সংবাদ বা প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে, কি-ওয়ার্ড সার্চ করে “ইবতেদায়ি শিক্ষকদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ, আহত ৫ জন ঢামেকে” শিরোনামে ‘বাংলা ট্রিবিউন’ এর একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে অন্যতম ঝালকাঠির দপদবিয়া শেখবাগল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক বেলায়েত হোসেন এর বরাত দিয়ে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্মারকলিপি নিয়ে যাওয়ার পথে শাহবাগে পুলিশ জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠি দিয়ে হামলা চালায়। এতে এক নারীসহ পাঁচ শিক্ষক আহত হন। স্ক্রিনশট দেখুন--
আরো কি-ওয়ার্ড সার্চ করে “আন্দোলন চালিয়ে যাবেন ইবতেদায়ি শিক্ষকরা” শিরোনামে ‘কালবেলা’র অনলাইনে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে শিক্ষক প্রতিনিধি কাজী মোখলেছুর রহমানের বরাত দিয়ে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যারা আহত হয়েছেন, এর বিচার ও চাকরি জাতীয়করণের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত এই আন্দোলন ছেড়ে যাবেন না ইবতেদায়ি স্বতন্ত্র মাদ্রাসা শিক্ষকরা। প্রতিবেদনে আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক শামসুল আলমের বরাতে বলা হয়, আমরা শাহবাগ থেকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে যেতে চেয়েছি। তবে আমাদের ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে অপেক্ষা করতে বলা হয়। এরপর সেখানে আসেন প্রধান উপদেষ্টার এপিএস সাব্বির আহমেদ। তিনি এসে আমাদের বক্তব্যগুলো শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে পৌঁছে দেবেন বলে জানান এবং সড়ক ছেড়ে বাসায় যেতে বলেন। আমরা তার কথায় আশ্বস্ত হতে পারিনি। যদিও প্রতিবেদনে কোথাও নিহত হওয়ার কথা পাওয়া যায়নি। স্ক্রিনশট দেখুন--
একই সার্চে ইবতেদায়ি শিক্ষকরা তাদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে প্রবেশ করতে গিয়ে পুলিশের বাঁধার সম্মুখীন হওয়ার নিয়ে প্রথম আলো, বিডিনিউজ, দৈনিক বাংলাসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। যদিও এসব প্রতিবেদনগুলোর কোথাও আহত হওয়ার কথা উল্লেখ্য থাকলেও নিহতের কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এদিকে, কি-ওয়ার্ড সার্চ করে “দাবি আদায়ে আজও রাজপথে ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা” শিরোনামে ‘বাংলাভিশন টিভি’র অনলাইনে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ২৭ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, রবিবার (২৬ জানুয়ারি) জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে যাত্রাপথে পুলিশি বাধার মুখে পরেন ইবতেদায়ি শিক্ষকরা। এক পর্যায় জলকামান ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়। একই দাবিতে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) নবম দিনে সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তারা। আলোচ্য প্রতিবেদনে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণ আন্দোলনের চেয়ারম্যান কাজী মোখলেসুর রহমান গণমাধ্যমের সঙ্গে গতকাল অবস্থান কর্মসূচীর বিষয়ে কথা বললেও সেখানে তিনি নিহতের ব্যাপারে কোনো তথ্য দেননি। স্ক্রিনশট দেখুন--
এ বিষয়ে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণ আন্দোলনের চেয়ারম্যান কাজী মোখলেসুর রহমানের সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি বুম বাংলাদেশকে বলেন, গতকাল পুলিশের বাঁধার মুখে পড়লে তারা আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এতে আমাদের কয়েকজন আহত হন। তবে কেউ মারা যাননি।
অর্থাৎ ইবতেদায়ি শিক্ষকদের কর্মসূচীতে পুলিশের হামলায় কেউ নিহত হননি।
সুতরাং ইবতেদায়ি শিক্ষকদের কর্মসূচীতে পুলিশের হামলায় দুইজন নিহত হয়েছেন দাবিতে পোস্ট করা হচ্ছে থ্রেডস ও ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।